তাবিজে কাজ না হওয়ায় বৈদ্যকে কুপিয়ে হত্যা

বাঁশখালী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৩ জুলাই, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

তাবিজ করার পরও প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ প্রেমিক ক্ষোভের বশে সেই বৈদ্যকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করল। এসময় বাধা দিতে এসে আহত হন বৈদ্যের স্বজনরাও। জনতার সহায়তায় ক্ষুব্ধ প্রেমিক মোহাম্মদ এহসানকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘাতক এহসান বাঁশখালী উপজেলার মাইজপাড়া এলাকার মো. ইব্রাহিমের ছেলে। খুন হওয়া বৈধ্য ফাতেমা বেগম (৪২) মধ্যম শীলকূপ গ্রামের মোস্তাক আহমেদ শিকদারের স্ত্রী। আহতরা হলেন ফাতেমার মেয়ে পাখি আক্তার (২০), প্রতিবেশী রাবেয়া বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে বৃষ্টি (১০)। গতকাল সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজারের পশ্চিমে মোস্তাক সিকদারের বাড়িতে।

ঘটনার বিবরণে বাঁশখালী থানার ওসি শফিউল কবির আজাদীকে বলেন, এহসান একটি মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়। তাকে বশে আনার জন্য এহসান ফাতেমা বৈদ্যের কাছ থেকে এক বছর আগে একটি তাবিজ নেয়। এহসানের দাবি, ওই তাবিজ শরীরে বাঁধার পর তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। সুস্থ হওয়ার জন্য সে আরও কয়েকটি তাবিজ নেয়। কিন্তু মেয়েটিকে প্রেমে রাজি করাতে পারেনি। গতকাল সোমবার আবার ফাতেমার শরণাপন্ন হয় এহসান। সকালে ফাতেমার বাড়ি যায় সে। তাকে ঘরের ভেতর বসিয়ে ফাতেমা একটি ডাব দিয়ে জানায়, সেটি মন্ত্র পড়ে দেওয়া হয়েছে, এবার মেয়েটি রাজি হবে। ডাব কেটে খাওয়ার জন্য তাকে একটি দা দেওয়া হয়। কিন্তু এহসানের হঠাৎ মাথায় রাগ উঠে যায়। সে দা দিয়ে ফাতেমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। তাকে বাধা দিতে গেলে ফাতেমার মেয়েসহ আরও তিনজনকে আহত করে। ওসি জানান খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত চারজনকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে যাই। স্থানীয় লোকজন এহসানকে আটক করে রেখেছিল। পরে আমাদের কাছে সোপর্দ করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মোস্তাক আহমদের প্রথম ঘরের সন্তান মিজান সিকদার বলেন, বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজারের পশ্চিমে মোস্তাক আহমদ সিকদার দ্বিতীয় স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে নিয়ে বসবাস করেন। ফাতেমা বেগম সংসারের শুরু থেকে ১০/১২ বছর যাবত হাজিরা (কবিরাজ) দেখার কাজ করে। তার কাছে প্রায়সময় নানা ধরনের লোক আসে। তাদের মত একজন হল এহসান। কোনও এক মেয়ের সঙ্গে নাকি এহসানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এজন্য ডাব পরা-তাবিজ নিয়েও কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল সে। সকালে এহসান এসে আবারও ডাব পরা নেয় এবং ডাবটি কেটে দিতে বলে। ফাতেমা ডাব কেটে দিতে দেরি হওয়ায় তার হাত থেকে দা কেড়ে নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় এহসান। বাধা দিতে গেলে ফাতেমার মেয়ে ও বাড়ির গৃহ পরিচারিকাকে কুপিয়েছে সে। পরে আহতদের উদ্ধার করে বাঁশখালীতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীলব্রত বড়ুয়া আজাদীকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আহত চারজনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। ডাক্তার ফাতেমাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিনজনের অবস্থাও গুরুতর। তাদের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
মিজান সিকদার জানান, এহসান বখাটে প্রকৃতির ছেলে। আমার বাবার দুই সংসারে এটা ছিল দ্বিতীয় সংসার। এ ঘরে পাখি আক্তার, রিদুয়ান সিকদার ও বাদশা সিকদার ৩ জন রয়েছে। রিদুয়ান ঔষধের দোকান এবং বাদশা এখন লেখাপড়া করে। পাখির বিয়ে ঠিক হয়েছে। সে আরো জানায় রাত সাড়ে নয়টায় শীলকুপের মাইজপাড়া নুর উদ্দিন সিকদার জামে মসজিদে জানাযা শেষে ফাতেমা বেগমের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদ পর্যন্ত লকডাউন শিথিল
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে বাড়ানো হবে ফিডার জাহাজ