হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান সাদমান আর শান্ত সেঞ্চুরির দেখা পান। এটা সাদমানের প্রথম সেঞ্চুরি হলেও শান্তর দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি।
সাদমানের শুরুটা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে হলেও এ জায়গায় খুব একটা সাফল্য পাচ্ছিলেন না তিনি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল সাদমান ইসলামের। ওই টেস্টের আগের দিন তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তাকে নিয়ে বলেছিলেন-সাদমানের ব্যাটিংটা টেস্ট মেজাজের সঙ্গে মানানসই। অধিনায়কের কথা মেনে নিজের অভিষেক ম্যাচটি টেস্ট মেজাজেই খেলেছিলেন। ১৯৯ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস এসেছিল তার ব্যাট থেকে। এরপর আরও একটি হাফসেঞ্চুরি পেলেও ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারছিলেন না। অবশেষে ক্যারিয়ারের অষ্টম ম্যাচে এসে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান তিনি গতকাল। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ভালো শুরুর পরও ইনিংসটাকে লম্বা করতে পারেননি। গত কয়েক বছর ধরে ঠিক এমনটাই হচ্ছিল সাদমানের সঙ্গে। কিন্তু গতকাল শনিবার ভিন্ন এক সাদমানকে দেখা গেলো। ঠান্ডা মাথায় জিম্বাবুয়ের বোলারদের বিপক্ষে দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। ১০১ বলে ৫ বাউন্ডারিতে হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়া সাদমান সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছেন ১৮০ বলে ১০ বাউন্ডারিতে। কাইয়ার বলে লং লেগে বলটি ঠেলে দিয়ে দুটো রান নেন সাদমান। আর তাতেই সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি সিরিজে ৭৬ ও ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সাদমান। এর বাইরে বড় কোন ইনিংস ছিল না তার।
বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে কেবলমাত্র দুই ব্যাটসম্যান একটি ফরম্যাট খেলেন। টেস্ট অধিনায়ক মোমিনুল হক কিছু সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেললেও বর্তমানে কেবল টেস্টই খেলছেন। অন্যদিকে সাদমান হোসেনকে বিশেষজ্ঞ টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই ফরম্যাটের বাইরে এখনো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়নি। সবমিলিয়ে দেশে তিনটি ও দেশের বাইরে ৫টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে সাদমানের।
এদিকে শ্রীলংকা সফরে গিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর চার ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ২৮। পঞ্চম ইনিংসে এসে আবার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। শনিবার হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়ে বোলারদের সাধারণ বোলার বানিয়ে ছেড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করে ১১৮ বলে খেলেছেন ১১৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৬৫তম ওভারে রয় কাইয়াকে দুই ছক্কা মেরে সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে যান শান্ত। পরের ওভারে মিল্টন শুম্বার বলে লংঅনে দুই রান করে ল্যান্ডমার্কে পৌঁছান। সেঞ্চুরির পরই আক্রমণ বাড়াতে থাকেন। পরে শুম্বা ও কাইয়াকে আরও দুটি ছক্কা মারেন। শেষ পর্যন্ত ১১৮ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় শান্ত ১১৭ রানের ইনিংসটি খেলেন। বয়সভিত্তিক ক্যারিয়ার পেরিয়ে আসার পর পরই জাতীয় দলে সুযোগ হয় শান্তর। শুরুতে সুযোগ না পেলেও জাতীয় দলের সঙ্গেই ছিলেন টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ড সফরে হুট করে দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার পর সুযোগ আসে তার। অভিষেক টেস্টে আহামরি কিছু করতে না পারলেও তার প্রতি আস্থা ছিল নির্বাচকদের। সেই আস্থাতে এখনো পর্যন্ত সব ফরম্যাটেই বিবেচিত হচ্ছেন তিনি। শ্রীলংকা সফরে যাওয়ার আগে তার সাত টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। ওই ১৪ ইনিংসে শান্তর সর্বোচ্চ রান ছিল ৭১। এরপর শ্রীলংকা সফরে গিয়ে পাল্লেকেলেতে প্রথম টেস্টেই খেললেন ১৬৩ রানের ইনিংস। গতকাল শনিবার আবার পেলেন সেঞ্চুরি। সাদমান ইসলাম (১১৫) ও নাজমুল হোসেনের (১১৭) জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়।