কোরবানির পশু নিয়ে খাগড়াছড়িতে সংকটে পড়েছেন খামারিরা। কোরবানির জন্য লালন-পালন করা পশুগুলো লকডাউনে বিক্রিতে ক্রেতা সংকটের কারণে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল হাট চালু হওয়ার কথা থাকলেও খাগড়াছড়িতে তা এখনো চালু হয়নি। পশু নিয়ে চিন্তিত খামারিরা। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে খামারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এবার প্রতিটি খামারেই কোরবানির জন্য পশু লালন-পালন করেছে। সরেজমিনে উপজেলার তিনটহরি এলাকায় এ কে এগ্রো এন্ড ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়,‘কোরবানির জন্য অন্তত একশ গরু প্রস্তুত করেছে তারা। রয়েছে ছাগলও। ফার্মেও কোয়ারেন্টাইন শেডে রাখা হয়েছে অন্তত ১শ গরু। প্রতিটির ওজন প্রায় ৫শ কেজির উপরে। ৬শ কেজির উপরে রয়েছে আরো কয়েকটি। দেশি ও বিদেশী জাতের ষাঁড় রয়েছে খামারে। মানিকছড়িতে ছোট বড় খামারের সংখ্যা ২শ ৫০টি। এসব খামারে কোরবানির জন্য ২২ হাজার ২শ ৬০ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে পশু বিক্রির শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।
গরু খামারে পশু পরিচর্যা, লালন -পালনের কাজ করেন ফিরোজ, শাহিন ও বাঁধন। তারা জানান, ‘প্রতিটি পশু প্রাকৃতিকভাবে লালন পালন করা হয়েছে। নিজের জমিতে আবাদকৃত ঘাস ও ভুট্টা খাওয়ানো হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হয়নি। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পাহাড়ের গবাদিপশুর কদর বেশি। গরু মোটাজাতকরণে কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না।’
মানিকছড়ির এ কে এগ্রো এন্ড ডেইরি ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক এমরান হোসেন জানান, কোরবানির জন্য আমরা ১শ পশু প্রস্তুত করেছি। এখাতে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কোরবানিকে কেন্দ্র করে করোনার কারণে দুই বছর ধরে পশু বিক্রি নিয়ে সংকট চলছে। এবার লকডাউনের কারণে ক্রেতার দেখা নেই। অন্যান্য জেলায় ডিজিাটল হাট থাকলেও খাগড়াছড়িতে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। লকডাউনের কারণে পশু বিক্রি করতে না পারলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। একই অবস্থা পাহাড়ে হাট বাজারগুলোতে। লকডাউনে জনসমাগম কম হওয়ায় পশু বিক্রি কমেছে। প্রতিবছর খাগড়াছড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণ পশু গরু ছাগল চট্টগ্রাম ফেনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হলেও এবার তা হচ্ছে না। পাইকারি বিক্রেতা না আসায় হাটে কমে গেছে গরু ছাগলের বিক্রি। বিক্রি না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানিতে পশু বিক্রি আশংকাজনকভাবে কমেছে। কোরবানির আগে মাত্র আর দুইটি হাট আছে অগ্রিম কেনা গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লোকসান হয়ে যাবে।’
খাগড়াছড়ির জেলা সদর, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাপ্তাহিক হাটে পশু বিক্রি হচ্ছে। তবে হাটগুলো অনেকটা ক্রেতাশূন্য। ব্যবসায়ীরা পাহাড় থেকে গরু কিনে ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো.নুরুল আফসার জানান, ‘জেলায় এবছর ২২ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এবার করোনা কারণে পশু বিক্রি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রাণী সম্পদ অফিসার গরুর ছবি তুলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন। এছাড়া মাইকিং করে বিক্রেতারা তাদের বিক্রয়যোগ্য পশু সর্ম্পকে ক্রেতাদের জানাতে পারেন। এতে লকডাউনেও খামারিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া সমতলের কিছু কিছু ব্যবসায়ী পাহাড় থেকে গরু কিনে নিয়ে যাবেন।’