প্রফেসর মোহাম্মদ আলীরা বারবার জন্মান না

মোসতাক খন্দকার | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

২৪ জুন সন্ধ্যায় আমি অন লাইনে আবৃত্তির একটা ক্লাস নিচ্ছিলাম। তখনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষক জানালেন ভীষণভাবে মন খারাপ করা সংবাদটা। শিক্ষকের শিক্ষক, অনেক উপাচার্যের শিক্ষক, ইংরেজি সাহিত্যের পণ্ডিত প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যার ইন্তেকাল করেছেন। ক্লাসে আর মনঃসংযোগ করতে পারলাম না। তাই অনলাইন ক্লাস থেকে নিজের সংযোগটা বিচ্ছিন্ন করে দিলাম। এক ধরনের গ্লানিতে আক্রান্ত হলাম। স্যার আমাকে শেষ কলটা করেছিলেন এপ্রিল মাসে। আমি আর আমার সহকর্মী সিরাজুল আরেফিন তাঁর বাসায় মোটামুটি নিয়মিত যেতাম। কিন্তু করোনার কারণে তা অনিয়মিত হয়ে যায়। এপ্রিল মাসে স্যার কল করার পর আমি যাবো যাবো করেও তাঁর বাসায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
২০০১ সালে তাঁর হাতেই আইআইইউসি-তে আমার চাকরি হয়। যার সামনে অনেক উপাচার্য, প্রফেসর, স্কলার শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে কুঁকড়ে যায়, যে মানুষটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সমীহ-জাগানো সৌন্দর্য ব্যক্তিত্ব সেই মোহাম্মদ আলী স্যার আমার ইন্টারভিউ বোর্ডে চেয়ার করছেন, এটা এখনো ভাবতেই আমি শিউরে উঠি। এই ভীতি কোন হিংস্র ও অপকারী মানুষের সামনে দাঁড়ানোর আতংকের ভীতি নয়। এই ভীতি শ্রদ্ধার, এই ভয় একজন কঠোর নিরপেক্ষ ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের মুখোমুখী হবার ভয়। নিশ্চিতভাবে এই কিংবদন্তী শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানের আলোকশিখার প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে দিতে হবে জেনে এই শিউরে ওঠা। পেশাগত কারণেই তাঁর কাছে যেতে পেরেছি, তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অবাক করা বিষয় এই যে, চাকরিতে যোগদানের ৭ মাসের মধ্যে আমার বিয়ে হয়। আমার বিয়েতে উনি সপরিবারে গিয়েছিলেন এবং নৈশভোজ সেরে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমার সাথে অনেকগুলো ছবি তুলে বাসায় ফিরেছিলেন ।
শুধু তাই নয়, বিয়ের পর আমাকে সস্ত্রীক দাওয়াত করে খাইয়েছিলেন। আমার বিয়েতে যাওয়া, আমাকে দাওয়াত খাওয়ানোর ব্যাপারটি আমার কর্মস্থল-বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত বিষয় ছিল। তাদের ভাষায় এই দুর্লভ সম্মান নাকি কারো কপালে জোটেনি। আমি সত্যিই তাঁর খুব স্নেহভাজন ছিলাম। সেটি আমি আমার কর্মস্থল থেকে তাঁর বাসা পর্যন্ত এবং আরো বেশ কিছু প্রেস্টিজিয়াস সম্মিলন অনুষ্ঠানে প্রমাণ পেয়েছি। নয়তো আমার মত লো প্রোফাইলের একজনকে তিনি এতটা সান্নিধ্যের আনুকূল্য দেবেন কেন? আমার কাছে তো ভিন্ন তথ্যও আছে। অনেকেই তাঁর কাছ থেকে আগে সাক্ষাতের তারিখ না নিয়ে সাক্ষাৎ পান নি। ২০০১ সালের আগেই প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যারের প্রাজ্ঞ অধ্যাপনা, ব্যক্তিগত মণীষা, অনিন্দ্যসুন্দর ব্যক্তিত্ব ইত্যাদির গল্প শুনতে শুনতে তিনি আমার কাছে জীবন্ত কিংবদন্তী হয়ে উঠেছিলেন। তাই তাঁর অধীনে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করা আমার জন্যে একটা থ্রিলিং ব্যাপার ছিল। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)-এ নিয়োগ পেয়ে আমি তাঁকেই প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে পেয়েছিলাম। তাই যে কোন অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় হোক আর ইংরেজিতেই হোক মোহাম্মদ আলী স্যারের বক্তৃতা ভাল করে শোনা, তা নোট করা এবং ওই বক্তব্য থেকেই সংবাদ তৈরি করা ছিল আমার পেশাগত প্রধান কাজ।এখানে একটা বিষয় উল্লেখ না করে পারছিনা। ওই সময়টাতে আইআইইউসি’র নিউজ আমাদের দেশের দৈনিকগুলো ছাপাতো না বললেই চলে। বরং নেতিবাচক সংবাদ ছাপা হতো সিরিজ আকারে। আমি যোগদানের পরও এই বিড়ম্বনার মুখোমুখী হই। আমি আমার ১৬ বছরের সাংবাদিকতা পেশার ভাবমূর্তিকে বিনিয়োগ করতে শুরু করি এবং খুব দ্রুত তার ফলাফল পাই। দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। সংবাদপত্রে ভাল কাভারেজ পেতে শুরু করে আইআইইউসি। আলী স্যার তা বুঝতে সক্ষম হন এবং আমাকে আরো কাছে টেনে নেন।
এরই মধ্যে ১ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের তারিখ পড়ে যায়। একদিন আমি দুপুরের খাবার সেরে অফিসে ফিরছি, দেখলাম অফিসের গলি থেকে আলী স্যারের গাড়ি বেরুচ্ছে। একটু থমকে গেলাম। কারণ তিনি এর আগেই বাসায় যান। দুপুরের খাবারটা তিনি বাসায় খেতেই পছন্দ করতেন।এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম স্যারের গাড়িটা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল, সাথে সাথে গাড়ির গ্লাসটাও নেমে গেল। সেই ব্যক্তিত্বময় এক চতুর্থাংশ হাসিতে কুশল বিনিময় নেই।একটু বিরক্ত এবং আপসেট মনে হলো। তাঁর রাশভারী দৃষ্টিটা আমার দৃষ্টির সাথে সংযোগ ঘটিয়ে আবার মুখটা ফিরিয়ে নিলেন। এবার ইংরেজিতে গরগর করে কয়েকটা বাক্য বলে চললেন। আমি আবারও অবাক হলাম। কারণ তিনি সাধারণত আমাদের সাথে দুয়েকটি ইংরেজি শব্দের ব্যবহার ছাড়া ইংরেজিতে কথা বলেন না। তিনি ইংরেজিতে যা বললেন তার সরল বাংলা করলে দাঁড়ায় – আমি যেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এবং সমাবেশ উত্তর নৈশভোজে সার্বক্ষণিকভাবে তাঁর পাশে থাকি এবং জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সাথে তাঁর ছবিগুলো যেন আমার ক্যামেরাবন্দী হয়। এই কথাগুলোও আমাকে বিস্ময়ের ঘোর লাগিয়ে দিয়েছিল। কারণ আলী স্যার একেবারেই প্রচারবিমুখ ও অবৈষয়িক ছিলেন। যদিও পেশাগত কর্মসূত্রেই তাঁর অনেক দুর্লভ ছবি আমার তোলা। অনেক ছবি অ্যালবাম করে এবং কিছু ছবি বড় করে বাঁধাই করে স্যারকে দিয়েছিলাম। যা এখনো স্যারের বাসার ড্রয়িং রুমে এবং করিডোরে শোভা পাচ্ছে। স্যার ছবিগুলো পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন। কারো কারো সাথে আমার নাম ধরে এই খুশি শেয়ারও করেছেন। যাহোক আলী স্যারের গাড়িটা চলে যেতেই আমি অফিসে পা রেখে আবহাওয়া বোঝার চেষ্টা করলাম। আলী স্যারকে বিষণ্ন বদনে দেখার কারণ বুঝতে আমার বেশি সময় লাগলো না।দিন গেল, মাস গেল, বছর গেল। তাঁর পেশাগত সান্নিধ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার দিনটিও চলে এল। আলী স্যার আইআইইউসি-তে তাঁর উপাচার্য জীবনের যবনিকা টানলেন। তাঁর এই চলে যাওয়াটা তাঁর জন্যে যে সুখকর ছিলনা এটা বুঝতে পেরেছিলাম। উনার এভাবে বিদায় নেয়াটা যতটা না বিস্ময়কর ছিল তার চেয়েও বিস্ময়কর ছিল এতগুলো দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উনার টিকে থাকাটা। কারণ প্রফেসর মোহাম্মদ আলীর মত আপাদমস্তক শিক্ষাবিদ, প্রাগ্রসর চিন্তাবিদ, আধুনিক, রুচিবান ও মুক্তমনা মানুষের সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকর্তাদের কিছুতেই এডজাস্ট হবার কথা নয়।এর পর তিনি আরো দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পান। কিন্তু কোথাও মেয়াদ পূর্ণ করা হয়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রেও গল্পগুলো ভিন্ন স্বাদের হলেও কারণ ও কৌশল ছিল অভিন্ন। আসলে ডানে আর বামে যাই বলিনা কেন প্রফেসর মোহাম্মদ আলীর মত সৎ ও নীতিবান মানুষের ঠাঁই কোথাও নেই। তাঁর মত একাডেমিশিয়ানকে হজম করার যোগ্যতা সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছিল না।
কর্মস্থলে আলী স্যারের দেখা পাওয়া বন্ধ হলেও স্যারের বাসায় আমার অবাধ যাতায়াত ছিল। কিন্ত একটা পর্যায়ে হঠাৎ করে আলী স্যারের সাথে দেখা সাক্ষাৎ এবং সর্বপ্রকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমার একটি বড় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে অপারগতা প্রকাশ করায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তাঁর স্নেহের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আমার প্রত্যাশার রেখা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তাই আমার অভিমানটা অনেকদিন সক্রিয় ছিল। কিভাবে যে এই সংযোগ বিচ্ছিন্নতার মেয়াদ দু’বছর অতিক্রম করে যায় আমি বুঝতে পারি নি। কিন্তু নিয়তি যে আমাকে আবার আমার এই প্রিয় মানুষের বুকের কাছে নিয়ে যাবেন তা তো আমার জানার কথা নয়। আমি প্রাক্তন ছাত্র এবং আমন্ত্রিত আবৃত্তি শিল্পী হিসাবে সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য গিয়েছিলাম। গেইট দিয়ে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের কাছে যেতেই দেখলাম আলী স্যার আর খালেদা হানুম ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন। আলী স্যার ম্যাডামের নাম ধরে বলে উঠলেন-“একে চিনেছো? আইআইইউসি’র পিআরও মোসতাক”। ম্যাডামের কাছে আমি অচেনা কেউ নই। কিন্তু ওই যে দু’বছর কোন যোগাযোগ রাখি নি, সেজন্যেই এই রসিকতাপূর্ণ বক্রোক্তি। ততক্ষণে আমার হাত আলী স্যারের পায়ের পাতায় পৌঁছে গেছে। আমি তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করে দাঁড়াতেই তিনি আমাকে এক হাতে কিছুটা সজোরে বুকে টেনে নিলেন। হঠাৎ স্যার আমাকে বললেন “মোসতাক, তাহলে আমরা একই স্কুলের ছাত্র।” প্রশ্নটার গূঢ়ার্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। নিষ্ঠুর রসিকতা করলেন না তো? না, স্যারের তো এই দাম্ভিক বদভ্যাস নেই। একটু নিজেকে সামলে নিয়ে যে সাহস কোনদিন দেখাই নি তাই করে বসলাম। বললাম “স্যার আপনার কথার একটু সংশোধনী আছে। আমি এই স্কুলে পড়েছি, আর এই স্কুল আপনাকে ছাত্র হিসাবে পেয়েছে। আমি এই স্কুলকে নিয়ে গর্ব করি, আর এই স্কুল আপনাকে নিয়ে গর্ব করে।” আমার কথা শুনে আলী স্যার হা হা হা করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন এবং আবারও সস্নেহে আমার পীঠের ওপর হাত রাখলেন। ওইদিনের ওই আনন্দের অনুবাদ করা আমার পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না।
আমি মোহাম্মদ আলী স্যারের ক্লাসরুমের ছাত্র না হলেও অফিস রুম আর ড্রয়িং রুমের ছাত্র ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য থাকাকালে, অঙফোর্ড, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গল্প করতেন তিনি। আমরা শুনে সমৃদ্ধ হতাম। উপাচার্যের দায়িত্ব ছেড়ে আসার পর স্যারের কথা আর আলোচনার বিষয়বস্তু পাল্টে যায়।আলোচনায় স্থান করে নেয় সাহিত্য, সংস্কৃতি, গান, আবৃত্তি। তাঁর কত স্মৃতি যে ভিড় করছে মনের ভেতর। ইংরেজি ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে, রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্র-সৃজন-সমগ্রে অগাধ পান্ডিত্য ছিল। অবিকৃত সুরে, যথার্থ স্বরলিপি অনুসারে দারুণ গায়কীতে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারতেন। ‘গীতবিতান’ তাঁর আত্মস্থ ছিল। গাইতেন মনের আনন্দে কিংবা বিষাদগ্রস্ত হয়ে।কিন্তু তিনি যে তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশের এনলিস্টেড শিল্পী ছিলেন এটা কাউকে জানাতেন না। আবেগপ্রবণ হয়ে খালেদা হানুম ম্যাডামই এসব তথ্য জানান দিতেন। বাংলা সাহিত্যের আরেক জাঁদরেল অধ্যাপক, বিশ্বসাহিত্যের খ্যাতিমান পন্ডিত, শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসানের কবিতা, পঞ্চাশের উল্লেখযোগ্য কবি হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতা সমগ্রের ইংরেজি রূপান্তর করেছেন প্রফেসর মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়াও অনেক খ্যাতিমান কবির কবিতার সফল ইংরেজি-ভাষান্তর করেছেন আলী স্যার। প্রায় পঁচিশ বছর আগের চট্টগ্রামের ‘মুক্তকন্ঠ’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের একটি লিটল ম্যাগাজিনের কথা আমার খুব মনে পড়ছে। “তবে তুমি পাল খোলো” নামাঙ্কিত এই স্মারকে আলী স্যার কবি ফররুখ আহমদের একটি কবিতা ইংরেজি ভাষান্তর করেছিলেন। প্রফেসর মোহাম্মদ আলী কবিতাটার শিরোনাম দিয়েছিলেন ‘ঊহহঁর’। কী যথার্থ শিরোনাম ছিল সেটি। কী দারুণ ভাষান্তর ছিল সেই কবিতার। একজন অনুবাদকের সমৃদ্ধ কাব্যিক বোধ না থাকলে এমন সার্থক ভাষান্তর সম্ভব হতো না। এই যশস্বী অধ্যাপকের বক্তৃতা ও বাকপটুতাও ছিল মুগ্ধ করার মত। শব্দচয়নে, বাক্যবুননে, ওয়ার্ড কয়েনিংয়ে তাঁর সাবলীল বিচক্ষণতা ছিল বিশেষভাবে লক্ষ করার মত। তিনি খুব ভাল জানতেন কোত্থেকে শুরু করতে হয়, কোথায় এবং কখন থামতে হয়।
তাঁর কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পরও অর্জিত শিক্ষার আভিজাত্য থেকে একচুলও নড়েন নি তিনি। তখনও তিনি খুবই চুজি ছিলেন। প্রেস্টিজিয়াস আমন্ত্রণ না পেলে কোথাও যেতেন না। অনেক অনুরোধের পর আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর সমাবর্তন বক্তা হতে রাজী হয়েছিলেন। তাঁর এই সম্মতি ও উপস্থিতিকে তাঁর কথিত আদর্শের বিরোধীরাও স্বাগত ও সম্মান জানিয়েছিলেন। আশির দশকের শেষভাগ থেকে এই দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত আলী স্যারকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে প্রান্তপৌঢ়ত্বে এসেও আলী স্যারের চেহারা ও কন্ঠে তাঁর প্রধান সৌন্দর্য ব্যক্তিত্বের লাবণ্য একটুও ম্লান হতে দেখি নি। প্রকৃত অর্থেই তিনি একজন আপাদমস্তক নীতিবান আর সৎ মানুষ ছিলেন। উনার এই অমূল্য সম্বল নিয়ে তিনি কখনো আপোস করেন নি। স্যারকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম ডায়েরি লিখার মত করে হলেও যাতে তাঁর জীবনীটা লিখে যান। লিখে গেছেন কিনা জানিনা। এই আত্মজীবনী পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে । প্রফেসর মোহাম্মদ আলী জাতীয় অধ্যাপক না হতে পারেন, কিন্তু তিনি আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক অধ্যাপক। তাই আলী স্যারের আত্মজীবনীটা লিখা হয়ে যাক তা অন্তর থেকে উপলব্ধি করেছিলাম।এমন নয় যে, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে আমার বা আমাদের বেদনা বা চেতনা জাগ্রত হয়েছে।আমরা দেখতে দেখতে শিখেছি আর শিখতে শিখতে জেনেছি যে প্রফেসর মোহাম্মদ আলীরা বারবার জন্মান না।
লেখক : আবৃত্তি শিল্পের শিক্ষক ও সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধপৃথিবীর মানচিত্রে উন্নয়নের রূপকার
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল