টিসিবির পণ্যের জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা

দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান ভোক্তারা তেলের মতো চিনি-ডালও প্যাকেটজাত করণের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

টিসিবির পণ্যের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চেয়েছেন ভোক্তারা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এখন চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল বিক্রি করছে খোলা বাজারে ট্রাকে করে। কিন্তু ভোক্তাদের দুর্ভোগের কথা হলো-টিসিবি প্রতিটি ট্রাকে বোতলজাত তেল বিক্রি করলেও চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করছে খোলা বস্তায়। বোতলজাত তেল খুব সহজেই ট্রাক থেকে সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু চিনি ও ডাল কেজি মেপে নিতে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। ভোক্তারা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে ডাল-চিনি এক কেজি, দুই কেজি ও চার কেজির প্যাকেটজাত করার দাবি জানান। একইসাথে ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করারও দাবি জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন টিসিবির ডিলাররাও। তাদের দাবি-সয়াবিন তেল বোতলজাত হওয়ায় গ্রাহকরা আসার সাথে সাথে নিয়ে যেতে পারছেন। চিনি ও ডাল প্যাকেটজাত না হওয়ায় গ্রাহকরা আসার সাথে সাথে নিতে পারছেন না। মেপে দেয়ার জন্য সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে টিসিবির ডিলার সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম রাশেদ আজাদীকে জানান, তেল ২ লিটার-৫ লিটার বোতলজাত থাকায় ক্রেতারা আসার সাথে সাথে দিয়ে দিতে পারছি। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে না। ক্রেতাদেরও দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ডাল ও চিনি যদি এক কেজি, দুই কেজি ও তিন কেজি করে প্যাকেটজাত করলে অনেক লাভ হবে। আমাদের স্টাফও কম লাগবে। ক্রেতাদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। এখন তাড়াতাড়ি মেপে দিতে গিয়ে কেউ বেশি, আবার কেউ ১০ গ্রাম কম পাচ্ছে। টিসিবি থেকে প্যাকেটজাত করে দিলে ভালো হয়। এখন আমরা বস্তা খুলে কেজি মেপে গ্রাহকদের দিচ্ছি।এতে গ্রাহকদের অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
তিনি টিসিবির চিনি ও ডাল প্যাকেটজাতের পাশাপাশি চট্টগ্রামে ট্রাক বৃদ্ধিরও দাবি জানান। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন ৮০টি ভ্রাম্যমান ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। অথচ ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের জন্য মাত্র ২০ টি ট্রাক বরাদ্দ। চট্টগ্রামে কম করে হলেও ৩০টি ট্রাক দেয়া উচিত। পাশাপাশি পণ্যের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়া উচিত। এখন আমাদেরকে(টিসিবির ডিলার) প্রতিদিন ৪০০ কেজি মসুর ডাল, ৭০০ কেজি চিনি ও ১ হাজার লিটার সয়াবিন তেল দেয়া হচ্ছে। সকাল ১০টায় যদি একটি ট্রাক তার নির্ধারিত পয়েন্টে যায়। তাহলে- দেখা যায় বেলা দেড়টা-দুইটার মধ্যে সব পণ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই পণ্য না পেয়ে আজে-বাজে কথা বলতেও শুনা যায়। একজন লোক দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেলে আমাদেরও খারাপ লাগে। এখন আমাদেরকে সব মিলে ২১শ’ কেজি দেয়া হচ্ছে। যদি ৩ হাজার কেজি করে দেয়া হতো তাহলে সবাইকে আমরা হাসি মুখে পণ্য দিতে পারতাম।
কাজীর দেউড়ি মোড়ে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে আসা শিক্ষক আশীষ আচার্য গতকাল আজাদীকে জানান, এ বৃষ্টির মধ্যে ট্রাক থেকে কেজি মেপে ডাল ও চিনি নিতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
জামালখান মোড়ে ট্রাক থেকে পণ্য নিতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক মো. আনিস জানান- যাদের শুধু তেল লাগছে তারা যাওয়ার সাথে সাথে একটি করে বোতল নিয়ে যেতে পারছেন। কিন্তু যাদের ডাল ও চিনি লাগছে তাদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। চিনি ও ডাল প্যাকেটজাত থাকলে এতো সময় লাগতো না। ক্রেতারা আসার সাথে সাথেই দিয়ে দিতে পারতো। এ বিষয়টি টিসিবির ভাবা উচিত।
তবে টিসিবির ডিলার সমিতির নেতাদের এ বক্তব্যের সাথে এক মত নন টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ। টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাত করে বিক্রির সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্রাম্যমান ট্রাকের নিয়ম হলো ক্রেতার সামনে পণ্য মেপে দিতে হবে। সকালে টিসিবির কার্যালয় থেকে পণ্য উত্তোলন করে সাথে সাথে বিক্রির জন্য স্পটে চলে যেতে হবে। এখানে প্যাকজজাত করার সুযোগ নেই। প্যাকেট কারা করবে? আমার এখান থেকে প্রতিদিন ৪৩টা ট্রাক যায়। টিসিবির তো এ সুয়োগ নেই,এতো লোকবলও নেই। আর ডিলারদেরও প্যাকেট করার সুযোগ নেই। তাদেরকে আজকের মাল আজকে দেয়া হয়। আগের দিন মাল দেয়ার সুযোগ নেই। আগের দিন মাল দিলে নয়-ছয় হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সব ডিলারতো এক রকম নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোদীর মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল
পরবর্তী নিবন্ধগর্জনিয়ায় তরুণীর মুখে এসিড নিক্ষেপকারী যুবক আটক