জেলা উপজেলায় অভিযান অব্যাহত

লকডাউনের ৫ম দিন

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৬ জুলাই, ২০২১ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

কঠোর লকডাউনের ৫ম দিনেও জেলা-উপজেলায় কঠোর অবস্থানে ছিল উপজেলা প্রশাসন। যত্রতত্র আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর বিভিন্ন খাবারের দোকানিকে করা হয় জরিমানা। তবে গতকাল সোমবার বিগত চার দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে মানুষের চলাচল। বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও। বিভিন্ন অলিগলিতে ছিল মানুষের জটলা।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনেও ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছিল ব্যাপক কড়াকড়ি। তবু অন্যদিনের তুলনায় গতকাল সোমবার লোকজনের চলাচল ছিল বেশি। শহরের অলিগলি ছিল মানুষের আড্ডায় সরগরম। ব্যাংক-বীমাও গতকাল খুলেছে। রাস্তায় বেরোনোর উপলক্ষ-অজুহাতও তৈরি হয়েছে! শাটডাউনের পঞ্চম দিনেও যথারীতি কক্সবাজার শহরের মোড়ে মোড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান। পাশাপাশি সড়কে টহল দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও। তারা টহল দেয়ার সময় সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে। সকাল থেকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এ সময় তাঁরা মাস্কবিহীন লোকজনদের মাস্ক বিতরণ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যটন জোনের কলাতলী মোড়ে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। তল্লাশি চৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কেউ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় জরিমানার শিকার হচ্ছে। জেলার আট উপজেলায়ও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে তৎপর থাকতে দেখা যায়। তবু শাটডাউনের পঞ্চম দিনে ব্যাংক-বীমা খোলায় শহরে লোকজনের চলাচল বৃদ্ধি পায়। এতে অন্য দিনের তুলনায় রিকশা চলাচলও বাড়ে। তবে তা মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুব অপ্রতুল। ফলে জরুরি কাজের প্রয়োজনে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেন। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে জেলা ও উপজেলার ৩২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। লোকজনদের সুরক্ষায় ঘরে থাকতে আহবান জানানো হচ্ছে।
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, সোমবার লকডাউনের ৫ম দিনে পটিয়ায় স্বাস্থবিধি না মানায় ভ্রাম্যামাণ আদালতে পৃথক ১০টি মামলায় ৫ হাজার ১শত টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার দুপুরে পটিয়া পৌরসদরের ছুবর রোড, আদালত রোড, আনোয়ারা রোড ও হাইওয়ে সড়ক এলাকায় স্বাস্থবিধি না মেনে দোকান পরিচালনা ও মাস্ক না পরায় এ অভিযান পরিচালনা করেন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফা ইয়াছমিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামু সেনানিবাসের লেফটেনেন্ট কর্নেল এম এ এম মাহাবুবুজ্জমান ও পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদারসহ থানা পুলিশ। তাছাড়া উপজেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট পরিচালনা করলেও সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনসাধারণ বিভিন্ন অজুহাতে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করেছে। এদিকে বিয়ের আগেই বিয়ের প্রস্তুুতির জরিমানা গুণতে হলো বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা এক যুবককে। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসে জরিমানা দিল সোহেল নামের ওই যুবক। গতকাল সোমবার সকালে পটিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমানণ আদালত পরিচালনাকালে ওই যুবককে ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় ‘মা’ রেস্টুরেন্টকেও দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ জরিমানা করেন। অন্যদিকে পটিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে্লেক্স ২৩ জনের করোনা নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায় বলে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ জানান।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সোমবার এ সময় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল) আইন- ২০১৮ এর আওতায় ৮টি মামলা দায়ের করে ১ হাজার ৩০০ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বাঁশখালীতে লকডাউনে কঠোর নজরদারি অংশ হিসাবে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও বাঁশখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি মোবাইল কোর্ট বাঁশখালীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া যেসব দোকান খোলা ছিল তাদের জরিমানা করা হয়।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় এবার লকডাউন কার্যকরে সড়কে কাজ শুরু করেছে রোভার স্কাউট দল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন তারা। লকডাউনের চতুর্থ দিন থেকে পঞ্চম দিনেও রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ কাপ্তাই সড়কের বিভিন্ন স্পটে দিনভর অবস্থান নিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। এদিকে লকডাউনের পঞ্চম দিনে গতকাল সোমবার রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন সড়কে বেড়েছে যানবাহন চলাচল, অলিগলিতে বেড়েছে লোক সমাগম। তবে এদিনও মাঠে ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। তারা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। তবে এদিন দুপুরের দিকে রোয়াজারহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সড়কে চলাচল করেছে গাড়ি, স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করে চলাচল করছে মানুষ। একই অবস্থা ছিল রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন অলিগলিসহ মূল সড়কে। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব চৌধুরী বলেন, পঞ্চম দিনেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের সচেতনতার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা ও মামলা করা হয়েছে। এদিন দুইজনকে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গত চার দিনের মতো কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ, র‌্যাবসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে লকডাউন উপেক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় রাঙ্গুনিয়ায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। সোমবার রাঙ্গুনিয়ার একদিনে ১৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৪ জন, সুস্থ ৪৭৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ার ২৭৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে গতকাল পঞ্চম দিনেও সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কক্সবাজার শহরসহ গোটা জেলায় পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, সেনা ও নৌ-বাহিনীর টহল জোরদার ছিল। সকাল থেকে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পৌর সভার প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় নৌবাহিনী। টেকনাফ কন্টিনজেন্ট অফিসার লে. কর্নেল এম আই জামিল জানান, করোনা মহামারি বিষয়ে সাধারণ মানুষ এখনো অসচেতন। তাই সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে যাতে আগ্রহী হয়, সেভাবেই আমরা কাজ করছি।
কাপ্তাই প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে ঘরে থাকতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কাপ্তাই উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। কাপ্তাই উপজেলার লকডাউন ও সার্বিক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদ্‌দাছছের হোসেন গতকাল কাপ্তাই উপজেলায় ঝটিকা সফর করেন। তিনি উপজেলা সদর বরইছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান, ওসি মো. নাছির উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) আকতার হোসেন, ওয়াগ্‌গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজিত তনচংগ্যাসহ আরো অনেকে।
রাউজান প্রতিনিধি জানান, ঘোষিত লকডাউনকে কার্যকর রাখতে পঞ্চম দিনের মত রাউজানে সক্রিয় ছিল উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে গতকাল স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে পাঁচ মামলায় পাঁচজনকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমান টিমের সাথে ছিল র‌্যাব ও আনসার দল। এ অভিযান পরিচালিত হয় উপজেলা সদরের ফকিরহাট, মুন্সিরঘাটা ও জলিলনগর এলাকায়। অভিযানকালে কয়েকজন বৃদ্ধা নারী, রিকশাচালক ও সিএনজি চালকের অর্থকষ্টের কথা শুনে তাৎক্ষণিক তাদেরকে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট দেন নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির। প্রশাসনের পক্ষে অভিযানে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ ।
লোহাগাড়ায় লকডাউনের পঞ্চম দিন ৪৮ মামলায় ২৩ হাজার ৫৬০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবীব জিতু এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। সাথে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১০ পদাতিক ডিভিশনের আলিকদম ২৭ বীরের ক্যাপ্টেন মো. মুক্তাদির আহমেদ আসিফ, থানার এসআই পার্থ সারথী হাওলাদার, ভূমি অফিসের মো. মহসিন লিটন ও সমির চক্রবর্তী। নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট আহসান হাবীব জিতু জানান, লকডাউন অমান্য করে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি, মাস্ক না পরা ও দোকান খোলা রাখায় সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারায় ৪৮ জনকে ২৩ হাজার ৫৬০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইনোভেশন শোকেসিংয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্থান
পরবর্তী নিবন্ধপেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ব্রাজিল