করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু দু’টিই বেড়ে যাওয়ায় সরকার সারাদেশে আবারও লকডাউন দিতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে লকডাউন চলছে সম্ভবত করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু একটি নির্দিষ্ট কাম্যমাত্রায় না আসা পর্যন্ত এ লকডাউন চলবে। এখন প্রশ্ন হলো এই লকডাউনে দেশের এক বিরাট জনগোষ্ঠী গরিব এবং খেটে খাওয়া মানুষদের চলবে কীভাবে। এরা তো দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ। এরা ঘর থেকে বের হতে না পারলে এবং কোনো কাজ-কর্ম করতে না পারলে তাদের পরিবার পরিজনই বা কীভাবে চালাবে? এই বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার কিছু ভেবেছে কি ?
করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে আমরা লক্ষ করেছি যে সরকারসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দেশের গরিব এবং খেটে খাওয়া মানুষদের কমবেশি সাহায্য সহযোগিতা করেছে কিন্তু বর্তমানে তেমনটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না, ফলে লকডাউনে গরিব এবং খেটে খাওয়া মানুষদের কান্না দীর্ঘতর হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকৃতপক্ষে লকডাউন দেয়ার আগেই এই বিষয়টি সরকারের আগে থেকেই ভাবা উচিত কারণ দেশের একবিরাট জনগোষ্ঠী যেহেতু গরিব এবং খেটে খাওয়া মানুষ তাদের অন্তত দৈনিক আহারের ব্যবস্থাটা করতে না পারলে তারা যে পেটের দায়ে লকডাউন মানবে না তা আমরা অতিতেও দেখেছি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার কঠিন লকডাউনে গেলে অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি লকডাউন চলাকালীন কাউকে ঘর থেকে বের হতে না দেয় তাহলে তাদের অভুক্ত থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না এক্ষেত্রে মানবিকতা বিষয়টা আমাদের বড়বেশি পীড়া দেবে। আমার মনে হয় লকডাউন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি গরিব এবং খেটে খাওয়া মানুষদের চিহ্নিত করে তাদের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়ে দেয় এবং এলাকার বিত্তবানরা যদি এতে সামিল হয় তাহলে এ সমস্যা থেকে আমরা সহজে উত্তরণ হতে পারতাম। মূলতঃ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং এর গতিবিধি নির্ণয় করা বেশ কঠিন একটি কাজ, এ পর্যন্ত করোনার গতিবিধি কোন সময় কোন দিকে যাচ্ছে কোনো দেশই নির্ণয় করতে পারেনি ফলে লকডাউনের বিষয়টিও দীর্ঘকালীন হতে পারে ফলে লকডাউন চলাকালীন দেশের গরিব এবং খেটে খাওয়া মানুষজন কীভাবে দিনযাপন করবে তা যদি সরকার একবার ঠিক করে ফেলতে পারে তাহলে লকডাউন দিলে বারবার এদের জন্য চিন্তা করতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে লকডাউন চলাকালীন দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন প্রণালি কীভাবে চলবে তার একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশা খুবই জরুরি, তা না হলে পেটের দায়ে কঠোর লকডাউনও কার্যকরি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষিণ হয়ে যায়। আমরা চাই লকডাউনে যেনো দেশের কোনো গরিব মানুষ কষ্ট না পায় অন্ততঃ দু’বেলা খেতে পারে। নিশ্চয় বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকরা গভীরভাবে চিন্তা করবেন।