আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে মানবতার স্বার্থে কাজ করে যাওয়া স্বপ্নোত্থিত তরুণদের অনুপ্রেরণা যোগাতে ১৯৯৯ সালে গর্ডন ব্রাউনের তত্ত্বাবধানে ব্রিটেনের প্রয়াত রাজবধূ ডায়ানার সম্মানে ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’ প্রচলন করা হয়। সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন এমন যেকোনো ব্যক্তির জন্য এই অ্যাওয়ার্ডটিকে সর্বোচ্চ সম্মাননা হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২১ সালে এই বিরল সম্মানের অধিকারী হয়েছেন চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা সাগর মজুমদার। তার জন্ম কুমিল্লায়। তিনি বর্তমানে নার্দিজ এডুটেক স্টার্টআপের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন, যার কাজ হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে শিক্ষাসেবা নিশ্চিত করা। তার প্রতিষ্ঠিত নার্দিজ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এডুটেক স্টার্টআপ। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাগর আজাদীকে বলেন, এই বিরল সম্মাননা আমার এত দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠাকে আরো সুদৃঢ় করে তুলেছে। আমি ভাগ্যবান যে, চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি। পুরস্কারটি আমার কাছে কেবল একটি সার্টিফিকেট এবং জাঁকজমকপূর্ণ স্বীকৃতি অনুষ্ঠান নয়। এর চেয়েও বিশাল কিছু। শুরুটা ২০১৭ সালে। সাগর তখন ব্র্যাকের আন্ডারগ্রেড স্টুডেন্ট। জটিল এবং দুর্বোধ্য বিষয়গুলোকে সহজভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য একটি টিম বানিয়ে শুরু করেন ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে এডুকেশনাল এবং ট্রেনিং বেইজড কন্টেন্ট তৈরির কাজ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তার নেতৃত্বে নার্দিজ তৈরি করেছে অসংখ্য ভিআর কন্টেন্ট, যার পরিধি বিস্তৃত বিজ্ঞান থেকে ইতিহাস অবধি। প্রতিষ্ঠানটির সমীক্ষা অনুযায়ী, সাধারণ পাঠদান অপেক্ষা এই পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী ৮০ ভাগ শিখনফল সহজেই আত্মস্থ করতে পারে। ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের কাছেই সমান জনপ্রিয়তা পায় এই টিচিং মেথড। দুর্বোধ্য বিষয়গুলো বোঝা না হয়ে পরিণত হয় জ্ঞানের সমুদ্রে আনন্দযাত্রার মতো। শিক্ষাকে আনন্দময় করার লক্ষ্যে নার্দিজ এখন পর্যন্ত অসংখ্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর সাথে কাজ করেছে। বর্তমানে স্পন্সরশিপের আওতায় নার্দিজ ‘রূপান্তর’ নামে একটি প্রকল্পে কাজ করছে, যার লক্ষ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষাকে সহজলভ্য করা। পাশাপাশি তারা কিশোরদের কাছে কোডিং এবং স্কুলগুলোতে প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধান জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাকে আরো ইন্টারএকটিভ করে তোলার জন্য এডুকেশনাল টুলস তৈরি এবং সর্বোপরি একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ইকোসিস্টেম তৈরি করা। সাগর এবং তার টিম প্রায় চল্লিশ হাজারের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জীবনকে প্রভাবিত করেছে। তাদের কাজকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার খুঁত বিশ্লেষণ করে একে সময়োপযোগী করার মাধ্যমেই সাগর স্বপ্ন দেখেন এমন এক সুদিনের, যেদিন দেশের প্রতিটি শিশুর কাছে থাকবে এঙপেরিয়েন্সিয়াল লার্নিংয়ের সুযোগ।