সাম্প্রতিক বর্ষণে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সীমানা দেয়ালসহ পাহাড়ের বড় একটি অংশ ধসে পড়েছে। এর ফলে কেন্দ্রের টাওয়ার ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্যাটেলাইটে অনুষ্ঠান পাঠানো এবং রিসিভ করার এই টাওয়ারটি ধসে পড়লে ১৮ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। জরুরি ভিত্তিতে পাহাড়টি রক্ষা করে টাওয়ারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গয়না ছড়া খালের পাড়ে মাঝারি আকৃতির একটি পাহাড়ের উপর বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রধান টাওয়ার রয়েছে। এই টাওয়ার দিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ধারণকৃত সব অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু-১ নামের স্যাটেলাইটে পাঠানো হয় এবং স্যাটেলাইট থেকে রিসিভ করা হয়। গত ১০ জানুয়ারি থেকে এই কেন্দ্র থেকে ১৮ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সমপ্রচার চলছে। সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে স্যাটেলাইট এবং টেরিস্ট্রিয়াল সমপ্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এই সেন্টারে রয়েছে অত্যাধুনিক একটি টাওয়ার। এই টাওয়ার দিয়েই মূলত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের শেষ দিকে সম্পন্ন করা হয় টাওয়ার নির্মাণের কাজ। ৪৩৮ ফুট বা ১৩৩ দশমিক ৫ মিটার উঁচু এই টাওয়ার দিয়ে ১২টি ক্যাবল চ্যানেল ও দুটি টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল চালানো যায়। টাওয়ারের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে ট্রান্সমিশন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই ট্রান্সমিশন দিয়ে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ টিভি ও চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র সম্প্রচার করা হচ্ছে।
গয়না খালের পাড়ের এই পাহাড়টির একটি অংশ সাম্প্রতিক বর্ষণে ধসে পড়েছে। এতে টেলিভিশন কেন্দ্রের টাওয়ার এবং ট্রান্সমিশন রুমের পাশের সীমানা দেয়ালের বড় একটি অংশ ধসে খালে পড়ে যায়। এতে পুরো এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সীমানা দেয়াল পড়ে যাওয়ার পর টেলিভিশন কেন্দ্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্যোগে টিন দিয়ে ঘেরার ব্যবস্থা করা হয়। সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং বাতি লাগিয়ে আলোকিত করা হয় এলাকাটি। কিন্তু পাহাড় ধস ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পাহাড় ধস ঠেকাতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ বা অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে টাওয়ার রক্ষা করা কঠিন হবে। একই সাথে ট্রান্সমিশন রুম এবং কর্মকর্তাদের চারতলা বাসভবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, খালপাড়ের এই পাহাড়টির মাটির পুরোটাই বালি। বৃষ্টিতে পাহাড়ের বড় একটি অংশ ধসে যাওয়ায় পাহাড়টির ওই অংশের মাটি উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এখন বর্ষা মৌসুম। পুনরায় ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়টি রক্ষা করা কঠিন হবে।
সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী বলেন, খালের তলা থেকে পাহাড়টির উচ্চতা পঞ্চাশ ফুটেরও বেশি। এই পাহাড়ের উপর স্টিল স্ট্রাকচারের বিশাল টাওয়ারটির চাপ রয়েছে। পাশেই রয়েছে একটি চারতলা ভবন। এই ভবনটির চাপও রয়েছে পাহাড়ের মাটিতে। এই অবস্থায় পাহাড়টি সুরক্ষিত করা না গেলে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্য বলেন, বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পাহাড়টি রক্ষা করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর।