উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, জরিমানা আদায়

কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে মাঠপর্যায়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করায় কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। উপজেলাগুলোতে নির্বাহী কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করেছেন। মানুষকে বাড়ি থেকে অপ্রয়োজনে বের না হতে নিষেধ করে চলেছেন। সেই সাথে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। হাটহাজারী, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :-
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, সরকার ঘোষিত সাত দিনের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে হাটহাজারীতে ৪২ মামলায় ৪২জনকে ১২হাজার ২শত টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মোটর সাইকেল, ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার, সিএনজি টেক্সিযোগে অপ্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরির দায়ে এই জরিমানা করা হয়।

এছাড়া সঠিক তথ্য ও কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এটিবি বাংলা ও কিউ টিভি নামে দুটি অনলাইন চ্যানেলের স্টিকার যুক্ত কার ও পাজেরো জিপ এবং একেইভাবে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় দুটি মোটর সাইকেল জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একটি হোটেলকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে গতকাল শনিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কাজ করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্যাহ পরিচালিত দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি টহল জোরদার করেছে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, সচেতনতা সৃষ্টিসহ কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রশাসন।
চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের তৃতীয়দিন গতকাল শনিবার চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৩৩টি মামলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলার বরকল ইউনিয়নের কানাইমাদারি, কালিরহাট, বাংলাবাজার, মৌলভীবাজার, সাতঘাটিয়া পুকুরপাড় এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ২০ মামলায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া চন্দনাইশ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পৃথক অভিযান চালান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহফুজা জেরিন। অভিযানে ১৩ মামলায় ৭ হাজার ১শ ৪০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গত ১ জুন থেকে সরকারিভাবে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর থেকে চন্দনাইশে লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহফুজা জেরিন সাংবাদিকদের জানান, করোনা থেকে মানুষকে রক্ষার লক্ষ্যে জনসচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
লোহাগাড়া
লোহাগাড়ায় লকডাউনের তৃতীয় দিনে ৩১ মামলায় ৪ হাজার ৩৯০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার সকালে উপজেলা সদর বটতলী মোটর স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবীব জিতু। সাথে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১০ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন মুক্তাদির আহমেদ আসিফ, থানার এসআই রুহুল আমিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সমির চক্রবর্তী।
নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট জানান, চলমান লকডাউন অমান্য করে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করায় সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারায় ৩১ জনকে ৪ হাজার ৩৯০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগামীতেও এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও রাঙ্গুনিয়ায় কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ দল। সকালে দৈনন্দিন কাজে মানুষ বের হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চলাচল কমে যায়। তবে বিকাল হতেই উপজেলার অলিগলিতে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এসময় বিনা প্রয়োজনে, অহেতুক এবং স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে আড্ডা দিতেও দেখা গেছে। তবে প্রথম দুইদিনের মতো এদিনও লকডাউন না মানায় জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলার মরিয়মনগর, ধামাইরহাট ও রাজারহাট বাজারে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ৮টি মামলায় মোট ৪ হাজার ৪০০ টাকার অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পুলিশের ৬টি টিম রাঙ্গুনিয়াজুড়ে টহল দিচ্ছে। সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া লকডাউন কার্যকরে মাঠে আছে র‌্যাবের টহল দল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে বিধি-নিষেধ অমান্য করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি অমান্যকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।’
মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, লকডাউনের তৃতীয় দিন শনিবার মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে অভিযান পরিচালনা করে সাত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসন। মীরসরাই উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি সুবল চাকমা জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বারইয়াহাট পৌরবাজার এলাকায় এবং তিনি উপজেলার হাদিফকিরহাট, বড়তাকিয়া, নিজামপুর ও কমলদহ বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১১০০ টাকা জরিমানা করেন। এসময় ওয়াহেদপুর এলাকায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ।
রাঙামাটিতে প্রতিনিধি জানান, সারাদেশের মত রাঙামাটিতে চলছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের তৃতীয় দিনে পণ্যবাহী গাড়ীসহ সব ধরণের যানবাহন বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেবল কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান খোলা ছিল। লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে কাজ করেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। এসময় তারা বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ী চেক করাসহ অকারণে যারা ঘোরাঘুরি করেছে, তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। লকডাউন কার্যকরে জেলা প্রশাসনের ৬টি মোবাইল টীম মাঠে কাজ করেছে। মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা শনিবারের অভিযানে ৩৩টি মামলায় ১২,৪০০ টাকা জরিমানা করে। এদিকে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বাজার দর নিয়ন্ত্রণে শহরের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের আহবানের পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আহবান জানান।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। গতকাল এ সময় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন- ২০১৮ এর আওতায় ১৫টি মামলা দায়ের করে ৬ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বাঁশখালীতে লকডাউনে কঠোর নজরদারি অংশ হিসাবে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও বাঁশখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি মোবাইল কোর্ট বাঁশখালীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় তারা অকারণে বাইরে বের হওয়া লোকজনকে সাবধান মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে হুশিয়ারি দেন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া যে সব দোকান খোলা রয়েছে তাদের জরিমানা করা হয়। এ সব দেশের জনগণের স্বার্থে করোনা থেকে রক্ষা পেতে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানান।
আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারায় বিভিন্ন হাটবাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় পথচারী, যানবাহন ও খাবারের দোকানকে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস. এম. দিদারুল ইসলাম। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ জানান, লকডাউন চলাকালে আইন ভঙ্গ করায় আনোয়ারা উপজেলার মালঘর বাজার, চাতরী চৌমুহনী, রুস্তম হাট, কাফকো সেন্টার, পিএবি সড়কের কালাবিবি দীঘি মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খাবারের দোকান, পথচারী, মোটরসাইকেল, সিএসজি অটোরিকশাসহ আইন অমান্যকারীদের ২২ মামলায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামালখানে কর্মহীন অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধউরুগুয়েকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিতে কলম্বিয়া