মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকি দিতে নূতন কৌশল হিসেবে বিভিন্ন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিচ্ছে অসাধু ব্যবাসয়ীরা। রাজধানী ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে কুরিয়ারে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে এমন তিনটি অবৈধ জর্দা চালান জব্দের পরেও বিষয়টি আলোচনায় আসে। গত এপ্রিল, মে এবং জুনে টানা তিনটি কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে সোয়া কোটি টাকার জর্দা জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টিম। কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ধকোটি টাকারও বেশি ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে জানান ভ্যাট কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম ভ্যাট অফিসের দায়িত্বশীল এক প্রিভেন্টিভ কর্মকর্তা বলছেন, আগে যেহেতু ভ্যাট ফাঁকির জর্দা কোনো কুরিয়র সার্ভিসে ধরা পড়েনি, তাই ধরে নিচ্ছি এটি ভ্যাট ফাঁকির নতুন কৌশল। সারা বাংলাদেশে এই চিত্র বিরাজ করছে বলতে পারবো না। তবে আমাদের মনে হচ্ছে-সড়ক পথে আসলে পথে হয়তো ভ্যাটের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইবে, তাই তারা কুরিয়ারকেই নিরাপদ বাহন মনে করছে। গত তিন মাসে জব্দ হওয়া তিনটাই জর্দার চালান। জর্দা যেহেতু তামাক জাতীয় পণ্য। জর্দার শুল্ক ৫০ শতাংশের বেশি।
ভ্যাট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল নগরীর কদমতলী এলাকার মেসার্স জিদান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে ৩৭টি কার্টনে প্রায় অর্ধকোটির টাকার জর্দা জব্দ করে আগ্রাবাদ ভ্যাট বিভাগের প্রিভেন্টিভ টিম। জব্দকৃত এসব জর্দার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আসে প্রায় ২০ লাখ টাকা। রাজধানীর মেসার্স জিদান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে কিছু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রাম ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের উদ্দেশ্যে ভ্যাটের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই জর্দা পাঠানো হয় বলে সেই সময় ভ্যাট কর্মকর্তারা জানান। এছাড়া গত পহেলা মে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকার মেসার্স নিরাপদ ট্রান্সপোর্ট এন্ড পার্সেল সার্ভিস নামের একটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ২৫ লাখ টাকার অবৈধ জর্দা জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট আগ্রাবাদ বিভাগের প্রিভেন্টিভ টিম। ১৭টি কার্টনে জব্দকৃত এসব জর্দার ওপর প্রায় ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আসে বলে জানিয়েছেন প্রিভেন্টিভ টিমের সদস্যরা। চালানটির অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসার্স নিরাপদ ট্রান্সপোর্ট এন্ড পার্সেল সার্ভিসের যাত্রাবাড়ী শাখা হতে কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রামের চাক্তাই, দোহাজারী এবং পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের উদ্দেশ্যে ভ্যাটের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ১৭ কার্টন অবৈধ জর্দা পাঠানো হয়। অন্যদিকে গত ২৫ জুন নগরীর হালিশহর থানাধীন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস লিমিটেডের হালিশহর শাখায় অভিযান চালিয়ে ৩৯ লাখ টাকার ৪০ কার্টন জর্দা জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের চট্টলা বিভাগের প্রিভেন্টিভ টিম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহের অতুল চক্রবর্তী রোডের মেসার্স নুরানী জর্দা ফ্যাক্টরি কতিপয় ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের উদ্দেশ্যে ভ্যাটের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ৪০ টি কার্টন জর্দা পাঠিয়েছে। এসব পণ্যে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির চেষ্টা করেছে বলে জানান ভ্যাট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. আকবর হোসেন দৈনিক আজাদী বলেন, ভ্যাট ফাঁকির দেয়ার কৌশল হিসেবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে। তবে আমরা প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম জোরদার করেছি। গোপন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমাদের কর্মকর্তারা ছুটে যাচ্ছেন।