খালেদা জিয়ার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না : বিএনপি

| শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সংসদে আইনমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলেছে, বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার ‘অপরাধ স্বীকার’ করে ক্ষমা চাওয়ার ‘প্রশ্নই আসে না’। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দলের এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যিনি কোনো অপরাধই করেন নাই, তার ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যা ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছুই নয়।’ বুধবার সংসদ অধিবেশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাসের আলোচনায় বিএনপির দুই সাংসদ তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার দাবি তোলেন। এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন মঞ্জুর করে সরকার তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছে। সেখানে বিদেশে না যাওয়ার শর্ত রয়েছে। এখন তা বদলানোর সুযোগ নেই। কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দিতে হলে সেটা আইনের মাধ্যমেই করতে হবে, অন্যভাবে কারো..। এক্ষেত্রে একটা উপায় আছে, তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাইতে পারে বা ৪০১ ধারায় সরকারের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। ক্ষমা চাইলে উনারা বিবেচনা করলে ক্ষমা করতে পারেন। আর সেই ক্ষমা চাইতে গেলে অবশ্যই দোষ স্বীকার করে চাইতে হবে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা প্রিন্স বলেন, এগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ ও কলুষিত করার ব্যর্থ চেষ্টা বলে আমরা মনে করি।
কর্তৃত্ববাদী সরকার যখন যেটা মনে করে সেটা জনগণের উপর চাপিয়ে দেয় এবং একই সাথে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। আমরা আইনমন্ত্রীর সংসদে প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়; শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে তিনি গুলশানের বাসাতেই ছিলেন। গত ১৪ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু খালেদা সরকারের নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্ত থাকায় তার বিদেশে যাওয়ার ‘আইনি সুযোগ নেই’ বলে সরকার জানিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর খালেদা জিয়া বাসায় ফিরে গেলেও তার অবস্থা ‘ভালো নয়; বলে বিএনপি নেতাদের ভাষ্য।
সংসদে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রিন্স বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং সেটি আবার পুনর্বিবেচনার করা যায় না, শর্ত মেনে মুক্ত করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সরকার নিজেই এ শর্ত সংশোধন করেছে। আবার শর্ত সংশোধন বা শিথিল করা যাবে না- এই বক্তব্য সঠিক নয়। সিআরপিসির ৪০১ ধারায় বিষয়টি উন্মুক্ত আছে। সরকার যে কোনো শর্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। তা একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। কেন খালেদা জিয়াকে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না, সেই ব্যাখ্যায় আইনমন্ত্রী বুধবার সংসদে বলেছিলেন, ‘আইনে ৬টি সাব-সেকশন আছে। এর মধ্যে কোথাও যদি দেখাতে পারেন আবার দরখাস্ত করতে পারবেন, আবার পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন, তাহলে আমি আইন পেশায় থাকব না।’
বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড, অক্সিজেন, সিলিন্ডার, হাইফ্লো নেইজল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বেড, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ এবং বিনামূল্যে আরো বেশি করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও সবাইকে দ্রুত টিকার আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয় এই সংবাদ সম্মেলনে। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ এবং ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকার প্রি-রেজিস্ট্রেশন আজ শুরু
পরবর্তী নিবন্ধটিকার নিবন্ধন করতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা