কোভিড ওয়ার্ডে এক শিশুর জন্মে অন্যরকম আমেজ

আজাদী প্রতিবেদন

| শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

একটি শিশুর জন্মের মাঝে যেন উৎসবের আমেজ দেখা দেয় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে। আত্মীয় না হয়েও আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন ডাক্তার নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। মুখে হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলায় ৬০লিটার করে অক্সিজেন নিয়েও প্রসব বেদনা ভুলে মা দেখান ‘ভি’ সাইন। একেবারে মৃত্যুর দুয়ার থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটির ভালো থাকাটাই যেন হাসপাতালে সকলের কাছে আনন্দের হয়ে ওঠে। মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এলাকার মানসী ভিলার আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী ঝুমা আক্তার (২৩) দশমাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকল্পে নিয়ে গেলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো হাসপাতালই কোভিড পজেটিভ এই মাকে ভর্তি করিয়ে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার রিস্ক নিতে রাজি হয়নি। নানা হাসপাতাল ঘুরে ঝুমা আক্তারকে গত ২৮ জুন ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। কোভিড আইসিইউতে শুরু হয় তার চিকিৎসা। অবস্থার অবনতি ঘটলে হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন যোগান দিতে হয় তাকে। তার পেটের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানো বিরাট এক চ্যালেঞ্জ পাশাপাশি শংকার কারণও হয়ে উঠে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কাছে। রোগীর অবস্থা এত নাজুক যে সিজার করানোর ঝুঁকি নিতেও চাচ্ছিলেন না তারা। ৬০লিটার অক্সিজেনে থাকা করোনা রোগী ঝুমা আক্তারকে সিজার করানোর পর বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে বলেও মনে করছিলেন চিকিৎসকরা। প্রতিটি সেকেন্ড যেন কাউন্ট ডাউন চলছিল সকলের।
গতকাল সন্ধ্যায় তীব্র প্রসব বেদনা উঠে ঝুমা আক্তারের। মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. আফরা, ডা. মিতা, ডা. রিহুল, ডা. ইমরান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ রূপনা বড়ুয়া, সিনিয়র নার্স রোকেয়া, মিডওয়াইফ সেতু, আইরিন, সালমাসহ সংশ্লিষ্টরা আইসিইউতে বিশেষ ব্যবস্থায় ঝুমা আক্তারের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর চেষ্টা শুরু করেন। সবাই শ্বাস বন্ধ করা উত্তেজনা নিয়ে সময় পার করছিলেন। রাত নয়টা নাগাদ ঝুমা আক্তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। এটি ঝুমা আক্তারের প্রথম সন্তান।
একটি শিশুর জন্মের সাথে সাথে সবার বুকের উপর থেকে যেন পাথর নেমে যায়। উৎসবের আমেজ দেখা দেয় ডাক্তার-নার্সসহ সকলের মাঝে। আড়াই কেজি ওজন নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটি সুস্থ আছে। ঝুমা আক্তারের ৬০ লিটার করে অক্সিজেন চলছে। নাকে হাই ফ্লো ন্যাজল লাগিয়েও ঝুমা আক্তার ‘ভি’ চিহ্ন দেখান।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার ফাহিম আলী রেজা গত রাতে জানান, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। এমন একজন রোগীর সন্তান জন্ম দেওয়াটা একটি কঠিন কাজ ছিল। আমরা খুবই টেনশনে ছিলাম। এমন খারাপ রোগী, হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা লাগানো কোভিড পজেটিভ রোগীর নরমাল ডেলিভারির ঘটনা মা ও শিশু হাসপাতালে প্রথম বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অবশ্য এর আগে কোভিড পজেটিভ অপর একজন মায়ের সন্তান নরমালি ভূমিষ্ট করানো হয়েছিল। তবে ওই রোগীর অবস্থা এত খারাপ ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮৮টি মামলা ও ৫৪টি গাড়ি আটক
পরবর্তী নিবন্ধঅবৈধ হ্যান্ডসেটে যাবে সতর্কবার্তা, তিন মাস পর ব্যবস্থা