গরিবের সেবা বন্ধ, পরে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে চালু

চমেক হাসপাতালে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

হাসপাতালের রোগীদের জন্য নির্ধারিত সেশন শেষ হওয়ায় কম খরচের কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিচ তলায় স্থাপন করা হয় স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টার। এতে করে নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহীতা গরীব রোগীরা বিপাকে পড়েন। ডায়ালাইসিস সেন্টারের এমন সিদ্ধান্তে গরীব রোগীরা জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে গতকাল সকাল থেকেই ডায়ালাইসিস সেন্টারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রোগী ও তাদের স্বজনরা ডায়ালাইসিস সেন্টারে ভিড় করেন। এক পর্যায়ে সেন্টার সংশ্লিষ্টরা ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেন। পরে দুপুর ২টার দিকে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পুনরায় এ সেবা চালু করতে বাধ্য হয় তারা। উল্ল্লেখ্য, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় চমেক হাসপাতালের নিচ তলায় আলাদা একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করেছে ভারতের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রাঃ) লিমিটেড। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৩১ শয্যার (মেশিনের) স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে গরীব রোগীদের সুবিধায় পিপিপি’র আওতায় এ সেন্টার স্থাপন করা হলেও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরে সব রোগীকে বেসরকারিভাবেই ডায়ালাইসিস সেবা নিতে হয় এখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালের মাধ্যমে আসা রোগীদের প্রতি সেশনে ৪৮৬ টাকা ফি দিতে হয় স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে। তবে অন্যান্য রোগীদের প্রতি সেশনে ফি দিতে হয় ২ হাজার ৬৬৩ টাকা। বছরে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সেশন ৪৮৬ টাকা ফি’র সুবিধায় দিয়ে থাকে এ সেন্টার। এর বাইরে সব রোগীকে বেসরকারি আদলে ২ হাজার ৬৬৩ টাকা হারে ফি দিতে হয়। হাসপাতালের কিডনি বিভাগে অপ্রতুল মেশিনের কারণে বেশির ভাগ রোগীকে এ সেন্টার থেকেই সেবা নিতে হচ্ছে।
ডায়ালাইসিস সেন্টার সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, সেন্টারে মোট প্রদেয় সেশনের ১০ শতাংশ সেশন কম খরচে (৪৮৬ টাকায়) হাসপাতালের গরীব রোগীদের জন্য নির্ধারিত। তাদের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরে হাসপাতালের রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ সেশন এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া আগের বছরের সেবা বাবদ সরকারের কাছ থেকে বিলও বকেয়া রয়েছে। যার কারণে হাসপাতালের রোগীদের কম খরচে সেবা বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানায় তারা।
এতে করে নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা প্রয়োজন, এমন গরীব রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, তারা (স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টার) কম খরচের ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় অসহায় রোগীরা বিপদে পড়েছেন। অনেকেই আমাদের কাছে এসে কান্নাকাটি করেছেন। কারণ সবার পক্ষে সেশন প্রতি ২ হাজার ৬৬৩ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রথমে হাসপাতালের দুজন সহকারী পরিচালক সেন্টারে গিয়ে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তারা কম খরচের কোটা শেষের পাশাপাশি বিল বকেয়ার কথা বলছিলেন। পরে আমি নিজে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়কেও বিষয়টি অবহিত করি। চলতি বছরের কোটা শেষ হলেও প্রয়োজনে আগামী বছরের সেশন থেকে সেবা অব্যাহত রাখতে বলি। আর বকেয়া বিলের জন্য বিল জমা দিতে বলি। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে সুপারিশ করে দিব। এরপরও তারা যাতে কম খরচের সেবাটা বন্ধ না করে। পরবর্তীতে তারা পুনরায় সেবা চালু করেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে সেন্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারের ম্যানেজার (একাউন্ট এন্ড ফাইনান্স) নাজমুল হাসানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে বাড়ে কমলে কমে না
পরবর্তী নিবন্ধশাটারে হাত রেখে দাঁড়িয়ে দোকানি