আবারো জলাবদ্ধতার চিরচেনা ভোগান্তি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ভারী বর্ষণে আবারো জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে নগরবাসী। তলিয়ে যায় শহরের নিচু এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। রাস্তাঘাটের কোথাও হাঁটু বা তার চেয়ে কম ছিল পানি। এতে দুর্ভোগ বাড়ে পথচারীর। সবমিলিয়ে জলাবদ্ধতাজনিত চিরচেনা ভোগান্তিকে সঙ্গী করে গতকাল আরো একটি দিন পার করলেন তারা। এদিকে বৃষ্টির সময়ে বিভিন্ন খাল-নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেছে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম। যেখানে যেখানে পানি আটকে গিয়েছিল সেখানে পরিষ্কার করে দেন তারা।
গত মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। বুধবার ভোর রাত থেকে বাড়ে এর তীব্রতা। দিনে কমে আসে গতি। তবে পুরো দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সন্ধ্যা থেকে প্রায় একটানা বৃষ্টি হয়েছে। দিনে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পানি নেমে যায়। তবে সন্ধ্যা ও গত রাতের বৃষ্টিতে আবারো জলজটের কবলে পড়েন নগরবাসী। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর আগে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছিল ২০ দশমিক ৫ মিলিমিটার। এছাড়া সকাল ৯টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ৯ মিলিমিটার, ১২ থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এদিকে গত রাত ৯ টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৮১ মিলিমিটার, বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৮৭ দশমিক মিলিমিটার, দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয় ৮৪ দশমিক ১ মিলিমিটার, সকাল ৯টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয় ৭৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি।
এদিকে দিনভর সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের এয়াকুব নগর, বংশাল রোড এবং আর সি চার্চ রোড এলাকায় প্রায় হাঁটু সমান পানি ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব আজাদীকে বলেন, ভোর সাড়ে ৬টায় এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছি। তখন এলাকার মানুষ পানিবন্দী ছিল। তাদের খোঁজ খবর নিলাম। এদিকে বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর, ২ নং গেট থেকে জিইসি হয়ে ওয়াসা পর্যন্ত প্রধান সড়কেও প্রায় হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে। শুলকবহর ফ্লাইওভারের মুখে পানির গভীরতা ছিল বেশি। বাস টার্মিনাল এলাকায়ও প্রায় হাঁটু সমান পানি ছিল। ষোলশহর, কাপাসগোলা, চকবাজার বাদুরতলা, আবদুল হামিদ লেন, চাক্তাই, বাকলিয়া, ডিসি রোড, হালিশহর, চান্দগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা, দক্ষিণ কাট্টলী ও কাতালগঞ্জ, চকবাজার জেলে পাড়া, মুহাম্মদ আলি শাহ দরগাহ লেন, ঘাসিয়ার পাড়া, ফুলতলা, কে বি আমান আলী রোড, ঝর্ণাপাড়া ও রসুলবাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, কমার্স কলেজ রোড ও প্রবর্তক মোড়েও জলজট হয়েছে।
এছাড়া মকবুল সওদাগর লেন, জঙ্গি শাহ মাজার এলাকা, বগারবিল, পেরেক ফ্যাক্টরি, ইছহাকের পুল ও মিয়া খান নগরে পানিবন্দী হয়ে পড়েন এলাকাবাসী।
চকবাজারের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেনে অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানে হাঁটুর উপর পানি ছিল বলে জানান তিনি।
পতেঙ্গার বাসিন্দা শাহেদ বলেন, মাইজপাড়া, সিমেন্ট ক্রসিং, আকমল আলী রোড এলাকায় বিকেল ৫টার দিকেও প্রায় হাঁটু সমান পানি ছিল।
এদিকে সড়কে পানি থাকায় বিভিন্ন গণপরিবহন ও প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করে আক্তারুজজ্জামান ফ্লাইওভার। এতে যানজট লেগে যায় সেখানে।
এদিকে আজও বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও আবহাওয়াবিদ সেখ ফরিদ আহমেদ। তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেইসাথে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বাতাসের সাথে হালকা থেকে মাঝারি এবং কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আজাদী বলেন, আগের চেয়ে পানি কম হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বাঁধ কেটে দিয়েছি। এর সুফল মিলেছে। বহাদ্দরহাট, মুরাদপুর ও ২নং গেটে আগের মতো জলাবদ্ধতা হয়নি। প্রবর্তক মোড়েও সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, নোয়া খালের মুখে সিডিএ’র বাঁধ আছে। ওটা আমরা কেটে দিয়েছিলাম। তারপরও আরো বড় করে কাটার জন্য তাদের চিঠি দিয়েছি। তারা সাত দিন সময় চেয়েছে। আসলে খালের মুখ ক্লিয়ার না করলে পানি দ্রুত নামবে কিভাবে। তিনি বলেন, যেখানে যেখানে ব্লক ছিল সেখানে আমাদের ইমার্জেন্সে টিম কাজ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিকিৎসা সহায়তায় চসিকের হটলাইন
পরবর্তী নিবন্ধকঠোর লকডাউন শুরু