ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

প্রেমের সালিশে গিয়ে নিজেই বিয়ে

| সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এক কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে সালিশ করতে গিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে কিনা, তা তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ওই কিশোরীকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ‘বাল্যবিবাহ’ ঘটেছে কিনা, তা তদন্ত করতে জেলা নিবন্ধককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পুরো ঘটনায় ফৌজদারী অপরাধ ঘটেছে কিনা তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করতে বলেছে আদালত। এসবের প্রমাণ মিললেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের আদেশে। খবর বিডিনিউজের। সংশ্লিষ্টদের আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। আর সেই কিশোরী ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাবেক দুই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম ও একরামুল হক টুটুল বিষয়টি নজরে আনলে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার স্বপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আইনজীবী আমাতুল করিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকলে সেটাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আগামী ৮ আগস্ট পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।
স্থানীয়রা জানান, ওই কিশোরী স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার প্রেমের টানে এক কিশোরের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন তিনি। বিষয়টি জানার পর কিশোরীর বাবা ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন হাওলাদারের (৬০) কাছে নালিশ করলে তিনি সালিশ ডাকেন। শুক্রবার সেই সালিশে বসার পর মেয়েটিকে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। পরে তিনি ওই কিশোরীকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিষয়টি এলাকায় আলোচনার জন্ম দেয়। ওই কিশোরীর বাবাও ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেওয়া কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তবে বিয়ে যিনি পড়িয়েছেন, তার মাধ্যমেই শনিবার চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে বাড়ি ফিরে যান সেই কিশোরী।
তালাকের পর ওই কিশোরী সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যানের সালিশে গিয়েছিলাম পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ে করতে হয়েছে চেয়ারম্যানকে। আমি এক রাত চেয়ারম্যানের বাসায় থাকলেও কোনোভাবেই তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। চেয়ারম্যান তা বুঝতে পেরে তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বিয়ে ও তালাকের বিষয়ে শাহীন হাওলাদার বলেন, সালিশে মেয়ের বাবা কোনোভাবেই মেয়ের পছন্দের ছেলের কাছে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। তাই তাদের সম্মতিতে কাজি ডেকে মেয়েটিকে বিয়ে করেছিলাম। যেহেতু মেয়ে বিয়েটা ভালোভাবে মেনে নিচ্ছিল না। তাই যিনি বিয়ে পড়িয়েছেন তার মাধ্যমে নিজের ইচ্ছায় মেয়েটি আমাকে তালাক দিয়েছে।
গত ২১ জুন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শাহীন হাওলাদার। প্রথম স্ত্রীর সংসারে দুই সন্তান রয়েছে তার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাঙ্গরখালে ড্রেজার মেশিনে চলছে বালু উত্তোলন
পরবর্তী নিবন্ধকাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত