চীনে করোনা সংক্রমণ হয়তো শুরু হয়েছিল দু’মাস আগেই

| শনিবার , ২৬ জুন, ২০২১ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

যে ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে, সেই নতুন করোনা ভাইরাস হয়তো ২০১৯ সালের অক্টোবরেই চীনে ছড়াতে শুরু করেছিল বলে মনে করছেন গবেষকরা। ওই বছর ডিসেম্বরে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহানে এ ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল চীন সরকার। তবে তার দুই মাস আগেই এ ভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়ে থাকতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় আভাস মিলেছে। পিএলওএস প্যাথোজেনস সাময়িকীতে শুক্রবার প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৯ সালের অক্টোবরের শুরু থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের গবেষকরা কনজারভেশন বা সংরক্ষণ বিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করে এই হিসাব বের করেছেন। খবর বিডিনিউজের। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ভাইরাসটির উদ্ভবের তারিখ সম্ভবত ২০১৯ সালে ১৭ নভেম্বর এবং পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। চীনে সরকারিভাবে প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য নথিভুক্ত করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এই রোগের উৎপত্তিস্থল হিসেবে উহান শহরের হুয়ানান সি ফুড বাজারকে চিহ্নিত করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের গবেষকরা বলছেন, ওই সময়ের আগের সংক্রমণগুলোর ক্ষেত্রে হুয়ানানের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ওই বাজারে পৌঁছানোর আগেই সার্স-সিওভি-২ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। এ বছরের মার্চের শেষে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং চীনের যৌথ গবেষণাপত্রে স্বীকার করা হয়েছে যে উহানে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আগে গুচ্ছ আকারে মানবদেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের জেস ব্লুম এ সপ্তাহে অপ্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে চীনের শুরুর দিককার কোভিড-১৯ রোগের কিছু মুছে ফেলা তথ্যউপাত্ত উদ্ধার করেন। সেখানে দেখা গেছে হুয়ানান বাজারের যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে সার্স-সিওভি-২ এর ‘প্রতিনিধিত্বমূলক’ নয়, এবং এর আগেই ভাইরাসটির একটি আদি ধরন ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যা চীনের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ রয়টার্সকে জানিয়েছে, ওই গবেষণায় যে নমুনাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা ২০২০ সালের মার্চে সিকোয়েন্স রিড আর্কাইভে (এসআরএ) জমা দেওয়া হয় এবং পরে চীনের অনুসন্ধানকারীদের অনুরোধে সেগুলো মুছে ফেলা হয়। চীনের অনুসন্ধানকারীরা জানিয়েছিলেন, সেগুলো হালনাগাদ করা হবে এবং আরেকটি আর্কাইভ জমা দেওয়া হবে। সমালোচকেরা বলছেন, এই তথ্যউপাত্ত মুছে ফেলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে চীন কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি নিয়ে কিছু গোপন করার চেষ্টা করছে। হার্ভার্ডের বোর্ড ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালিনা চ্যান এক টুইটে লিখেছেন, উহানে কীভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছিল, সে সম্পর্কিত তথ্যউপাত্ত আন্তর্জাতিক তথ্যভাণ্ডার থেকে মুছে ফেলার অনুরোধ কেন করবেন বিজ্ঞানীরা? সায়েন্টেফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা জেনোমিক তথ্যউপাত্ত ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, সার্স-সিওভি-২ ভাইরাস অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের ফুসফুসে অনেক সহজে আক্রমণ করতে পারে। এটা থেকে বোঝা যায়, মানুষ যখন এ ভাইরাস শনাক্ত করল, তার আগেই তা মানবদেহে বাসা বাধার বিষয়ে মানিয়ে নিয়েছিল। গবেষণাপত্রে বলা হয়, এমনও সম্ভাবনা আছে যে, অন্য কোনো প্রাণী ভাইরাসটির মধ্যবর্তী বাহক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। আবার কোনো পরীক্ষাগার থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে কি না, সেই সম্ভাবনাও নাকচ করা যাচ্ছে না। উহান সফরকারী ডব্লিউএইচওর অনুসন্ধান দলের সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টমেইড হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডমিনিক ডয়ার বলেন, যদিও এটা স্পষ্ট যে শুরুর দিকের ভাইরাসগুলোর মানুষে সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ প্রবণতা ছিল, তার অর্থ এটা না যে সেগুলো মানব-সৃষ্ট। এরকম কোনো সিদ্ধান্ত এখান থেকে নিতে চাইলে সেটা আসলে অনুমাননির্ভর হয়ে যাবে। ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের গবেষণার ফলাফলের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসা গবেষণাকেন্দ্র কিরবি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক স্টুয়ার্ট টারভিল বলেন, কোভিড-১৯ এর উৎপত্তির বিষয়ে মজবুত একটি ধারণা পেতে আরও সেরাম নমুনা দরকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়ে পড়ার হাইপোথিসিস প্রতিষ্ঠা করার যে চাপ দেখা যাচ্ছে এবং চীনে এ বিষয়ে ফলোআপ গবেষণা করার যে স্পর্শকাতরতা- তা বিবেচনায় নিলে বলা যায় এ ধরনের প্রতিবেদন হাতে পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে ধসে পড়া ভবনে নারী-শিশুসহ নিখোঁজ ৩০, নিহত ১
পরবর্তী নিবন্ধজম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা ফেরাতে মোদির কাছে স্থানীয় নেতাদের দাবি