মূল হোতা এয়াকুবসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

কবরস্থান নিয়ে সংঘর্ষ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ জুন, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কবরস্থানে লাশ দাফনে টাকা নিতে বাধা দেওয়ায় নগরীর বাকলিয়ায় গত ১১ জুন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষের মূল হোতা এয়াকুবসহ (৫০) আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সংঘর্ষের আসল রহস্য বেরিয়ে আসে। হামলাকারীরা এলাকায় এয়াকুব বাহিনী নামে পরিচিত।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে আজাদীকে বলেন, রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর পুলিশের ধরপাকড়ের মুখে এয়াকুব মীরসরাইয়ে জোরারগঞ্জ এলাকায় এক বাসায় আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ঢাকার পল্টন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী মো. ওসমান আলী (৩৫) ও মো. মাসুদ আলমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দিনভর বাকলিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত এয়াকুব নগরীর বাকলিয়া থানার আব্দুল লতিফের হাট এলাকার ইসলাম সওদাগরের ছেলে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ-পদবিতে না থাকলেও এয়াকুব নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। বছর তিনেক আগে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং তাকে জোরারগঞ্জে যে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেটিও এক যুবলীগ নেতার বাসা।
উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক জানিয়েছেন, ঘটনার মূল হোতা এয়াকুবসহ এ নিয়ে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজে চার জনকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে ওসমান আলী ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মহিউদ্দিন ও ওয়াসিম নামে আরও দু’জন পলাতক আছে।
এয়াকুবকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমীন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশ যখন তৎপর হয়, তখন এয়াকুব এলাকা ছেড়ে পালিয়ে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে একজনের আশ্রয়ে ছিল। তার অবস্থান শনাক্ত করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা যখন অভিযানে যাই, তখন সে পুকুরপাড়ে বসে তাস খেলছিল। পুলিশ দেখে ধানের জমি দিয়ে দৌঁড় দেয়। এলাকার লোকজন আমাদের সহযোগিতা করে। পরে তার স্বীকারোক্তি নিয়ে গভীর রাতে আব্দুল লতিফ হাটখোলা চাঁন্দগাজী সড়কের খাল পাড় থেকে দুই রাউন্ড গুলি ও ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও দুটি কিরিচ উদ্ধার করা হয়।
ওসি রুহুল আমীন বলেন, কবরস্থানটি মূলত বড় মৌলভী বাড়ির পারিবারিক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। পরে তারা সেটি সামাজিকভাবে লাশ দাফনের জন্য উন্মুক্ত করে। কবরস্থানটি বড় মৌলভী বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এবং এয়াকুবের বাড়ির পাশে। এয়াকুব গত কয়েক বছর ধরে সেই কবরস্থানে লাশ দাফনকারীদের থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে। এতে বাধা দেয় বড় মৌলভীবাড়ির বাসিন্দা ও এলাকার লোকজন। ঘটনার দিন সকালে বড় মৌলভী বাড়ির সন্তান সাইফুল্লাহ মাহমুদ এলাকার লোকজনকে নিয়ে কবরস্থানে দাফন করতে টাকা না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগাতে যান। এয়াকুব বাহিনীর লোকজন এসময় তাদের উপর হামলা চালায়। ক্ষেপে যায় এলাকার মানুষ। একপর্যায়ে এলাকার লোকজনের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় তারা। আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করি। মামলায় এয়াকুবসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন বাকলিয়া থানাধীন কালামিয়া বাজার আব্দুল লতিফ হাটখোলা রোডে বড় মৌলভী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সাইনবোর্ড লাগাতে যায়। এসময় স্থানীয় এয়াকুব বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইব্রাহিমের পরিবারের উপর আক্রমণ করে। সংঘর্ষ চলাকালে আসামিরা বিদেশি অস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণ করে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধসহ ১৩ জন আহত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকা কতটা কার্যকর হবে জানা যাবে রক্ত পরীক্ষায়
পরবর্তী নিবন্ধজরিমানা গুনল কমিউনিটি সেন্টার ও বর-কনের পরিবার