দীর্ঘদিন পর পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় পৌরসভা-কলেজসহ ৭টি নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের এসব কমিটি ঘোষণা করেন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে কমিটি না থাকায় কিছুটা হতাশা থাকলেও গতকাল কমিটি ঘোষণার পর সেই হতাশা অনেকটা কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে পদবঞ্চিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কমিটির গঠনের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অবরোধ-বিক্ষোভ করে। এছাড়া ঘোষিত কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতাকর্মীরা।
আমাদের চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, সদ্য ঘোষিত চন্দনাইশ উপজেলা, চন্দনাইশ ও দোহাজারী পৌরসভা এবং গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপজেলার গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট এলাকায় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করায় সড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। একই সাথে মহাসড়কের বুলার তালুক, দোহাজারী পৌরসভা ও বাদামতল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকালে নেতাকর্মীরা বলেন, প্রকৃত তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অছাত্র ও অপরিচিতদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের মাঠে ময়দানেও কোনোদিন দেখা যায়নি। এমনকি এলডিপি ঘরণারও অনেকেই উক্ত কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত কমিটি বাতিল করা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন নেতাকর্মীরা। এদিকে ঘোষিত কমিটিতে তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা স্থান না পাওয়ায় সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে ১৮ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সড়ক অবরোধের ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক অবরোধের বিষয়টি জেনে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছেন এবং পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এএসপি সার্কেল আনোয়ারাসহ উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা গেছে, চন্দনাইশ উপজেলায় মাইনুর রহমান আসিফকে আহ্বায়ক, আলমগীর ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আমির হোসেনকে চন্দনাইশ পৌরসভা সভাপতি, রাইসুল আসাদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক, সাজ্জাদ হোসাইনকে দোহাজারী পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি, আসিফুল হককে সাধারণ সম্পাদক, আসিফ মোস্তফা কামালকে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ সভাপতি এবং শাফাতুন নুর চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
এছাড়া পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগে নাজমুল সাকের ছিদ্দিকীকে আহ্বায়ক ও অজয় শীলকে পটিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন মো. রুবায়েত হোসেন। অপরদিকে পটিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের গিয়াস উদ্দীন সাব্বিরকে সভাপতি, আব্দুল হান্নানকে সাধারণ সম্পাদক করে পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন কমিটির ঘোষণার ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দীন আজাদীকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছিল। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সুসংগঠিত করতে স্থানীয় এমপি, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ৭টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেছি। এই কমিটি ঘোষণায় তৃণমূলের মধ্যে চাঙাভাব বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, পটিয়া উপজেলা, পটিয়া পৌরসভা, পটিয়া সরকারি কলেজ, চন্দনাইশ উপজেলা, চন্দনাইশ পৌরসভা, দোহাজারী পৌরসভা ও গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে আমরা কমিটি ঘোষণা করেছি।
নতুন কমিটির বিষয়ে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল সাকের ছিদ্দিকী বলেন, ঘোষিত কমিটিতে যারা রয়েছে তারা সবাই দলের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতা। জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির নির্দেশনায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ যে কমিটি দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য কমিটি। তিনি দক্ষিণ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানান।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আবু তৈয়ব সোহেল বলেন, কমিটি গঠন করার আগে আমার কাছে নেতাকর্মীদের ডাটা চেয়েছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি যেসব নেতাকর্মীর ব্যাপারে অনুরোধ করছিলাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের নাম কমিটিতে রেখেছেন। তিনি কমিটিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।