আদালতের জামিন আদেশের এক সপ্তাহ পরেও মুক্তি মেলেনি রোহিঙ্গা যুবকের কাছে বৈবাহিকভাবে প্রতারিত রাঙ্গুনিয়ার সিরাজ খাতুনের। জিম্মাদার হিসেবে জামিননামায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বাক্ষর না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা না হয়েও গত ২১ দিন ধরে ৯ মাসের শিশুসহ চট্টগ্রাম কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। সিরাজ খাতুনের আইনজীবী এ এম জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, সিরাজ খাতুন রোহিঙ্গা না। অথচ এ অপরাধে সে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। এক সপ্তাহ হয়েছে, তার জামিন হয়েছে। অথচ সে এখনো কারাগারে। জিম্মা প্রশ্নেই তার জামিন আটকে আছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান জামিননামায় সাক্ষর করেছে, কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সাক্ষর করছে না। আমরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ) আদালতকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাবো। দেখি কি হয়।
১০ বছর আগে সিরাজ খাতুন ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন সিদ্দিকী নামের রোহিঙ্গা এক যুবককে। তখনও তার পরিচয় জানা যায়নি। কিন্তু যখন স্বামীর আসল পরিচয় জানতে পারেন সিরাজ খাতুন, ততদিনে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। নানা জায়গা ঘুরে ঠাঁই হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বনে গেলেন রোহিঙ্গা নারী। এখানেই ঘটনাটি শেষ হতে পারতো। কিন্তু বিধিবাম। স্বামী সিদ্দিকী নিরুদ্দেশ হয়ে পড়লে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে শেকড়ে ছুটে আসতে হয় তাকে। সব শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে পরিবার। মানসম্মান রক্ষা ও জীবিকা নিশ্চিতে তাকে ওমান পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পাসপোর্ট বানাতে ডবলমুরিংয়ের মনসুরাবাদ অফিসে যান তিনি। সৃষ্টি হয় বিপত্তি। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েন। নামের মিল ছিল না। কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্টে দেখা যায়, তিনি একজন রোহিঙ্গা। সিরাজ খাতুন (৩২) রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকার পূর্ব খুরুশিয়া গ্রামের মৃত নুর আলমের মেয়ে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকায় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন রোহিঙ্গা যুবক সিদ্দিকী। পাশাপাশি অন্যের ফসলি জমিতে কাজ করতেন তিনি। এক সময় সিরাজ খাতুনের সাথে পরিচয় হয় তার। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। ঠিক করেন, দুজনে বাকি জীবন একসাথে কাটাবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু নানা জায়গায় ঘুরেও যেন স্থির হতে পারছিলেন না তারা। একপর্যায়ে আটক হন পুলিশের কাছে। পুলিশ তাদের পাঠিয়ে দেয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে নতুন করে পথচলা শুরু করেন দুজনে। এর মধ্যে ত্রাণের আশায় সিরাজ খাতুনকে রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।