সিনোফার্মের তৈরি চীনা টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামেও। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার মাধ্যমে গত শনিবার থেকে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। তবে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গত রোববার থেকে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা অন্যদের টিকাদানও শুরু হয়েছে। মেডিকেল-ডেন্টাল শিক্ষার্থীসহ এবার মোট দশ ক্যাটাগরির মানুষ সিনোফার্মের এ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন।
অগ্রাধিকার তালিকায় যারা : সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং কলেজ, আইএইচটি ও ম্যাটস-এর শিক্ষার্থীরা এ টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এবার অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কেবল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা এ অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন। এছাড়া করোনায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্য থেকে নিবন্ধন করেও কেউ যদি টিকা না পেয়ে থাকেন, তবে তারাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ টিকার প্রথম ডোজ পাবেন। এর বাইরে যে কেন্দ্রে সিনোফার্মের টিকাদান চলছে, ওই কেন্দ্রে টিকা গ্রহণের জন্য পূর্বে অনলাইনে নিবন্ধনকারীরাও এ টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। আর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বড় প্রকল্পে কর্মরতদের পাশাপাশি মৃতদের দেহ সৎকারে নিয়োজিত কর্মী, চীনা নাগরিক এবং বিদেশগামী কর্মীদেরও এ টিকার অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে।
টিকা পেতে বিদেশগামী কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যা করতে হবে : টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে মেডিকেল সেক্টরের শিক্ষার্থী ছাড়া অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত অন্যান্য সকলের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে করে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকলেও বিদেশগামী কর্মী ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়েছেন। বয়সের বাঁধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন নি। বিদেশগামী কর্মীদের বেশির ভাগও টিকার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করেন নি। নতুন করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকলেও রেজিস্ট্রেশন জটিলতায় পড়েছেন বিদেশগামী কর্মী ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
টিকা পেতে হলে বিদেশগামী কর্মী ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হোয়াইট লিস্টে অর্ন্তভুক্ত হতে হবে। স্থানীয় জনশক্তি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো অফিসে গিয়ে তারা যোগাযোগ করবেন। ওই অফিস থেকে এ সংক্রান্ত তালিকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তালিকা আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইসিটি বিভাগ থেকে তালিকাভুক্তদের নাম-জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ও মোবাইল নম্বর সুরক্ষা ওয়েবসাইটে ইনপুট দেয়া হলে তারা সহজেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। আর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে টিকা নিতে আর সমস্যা হবেনা। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে জনশক্তি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কার্যালয় রয়েছে। বিদেশগামী কর্মীদের ওই অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
এদিকে, একই ভাবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউজিসি হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তালিকা আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরাও সহজে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। আর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে তাদেরও টিকা নিতে আর সমস্যা হবেনা।
তবে প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ বলে স্বীকার করেছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এই প্রক্রিয়ায় রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) নতুন একাডেমিক ভবনের নিচ তলায় দুটি বুথে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীর বাইরে অগ্রাধিকার তালিকায় যারা আছেন, আমরা তাদেরও টিকা দেয়া শুরু করেছি। এছাড়া যারা চমেক হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে আগে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, কিন্তু টিকা নিতে পারেন নি, তারাও এবার টিকা পাবেন। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি সাথে নিয়ে আসলেই তারা টিকা নিতে পারবেন।












