‘যদি এনে দাও আমার হাতে রক্তিম সূর্য’
উপল ইসলামের ব্যাকগ্রাউন্ড চট্টগ্রাম। তিনি একসময় কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পরে দেশের বাইরে, নানা জায়গায়। তাকে অবশ্য এভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। বাঙালি-আমেরিকান মিউজিশিয়ান বলাই ভালো। তিনি লিখতে পারেন। গাইতে পারেন। পারেন কম্পোজিশনও। হিপ-হপ, পপ, প্রগ্রেসিভ এইসব জনরায় তার ঘোরাফেরা। অন্তত যদ্দুর আমি শুনেছি, তার গান ভাল লেগেছে। সাউন্ডও।
‘ডুব দিয়েছি মরবো বলে, মরণ পোড়া ভাগ্যে নাই’
ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের আশপাশেই উপল ইসলামের মিউজিক। যদিও ফুয়াদের সঙ্গে তার কোলাবেরেশনগুলা চমৎকার। তাদের দেখা সম্ভবত নিউইয়র্কে। এরপর ‘ক্রান্তি’ (২০০৩) প্রজেক্টটা বাদ দিলে বিভিন্ন মিক্সডে তাদের গানগুলা অনেক মানুষ শুনেছে। বিশেষ করে এফএম রেডিওতে। ‘মেয়ে ফিরে এসো’, ‘জীবন গেল’, ‘গঙ্গা’, ‘তোর জন্য বন্য’, ‘সাদা কালো’―এইসব গানে ভয়েজ দিয়েছেন উপল ইসলাম। লিখেছেন। সুর বসিয়েছেন। এর মধ্যে একটা সিনেমার গান। তাকে এফএম রেডিও স্টার হিসেবেও মেনশন করা যায়।
‘আমি পাল্টে দিতে পারি তোর চোখের ওই রঙ’
তিনি লেখার হাত পেয়েছেন সম্ভবত উত্তরাধিকার সূত্রে। তার বাবা প্রয়াত গীতিকবি হেনা ইসলাম। এটা তো সবাই জানে―সত্তর-আশির দশকে হেনা ইসলাম কী সব গান-কবিতা লিখেছেন। স্পার্ক জেনারেশনের একজন ছিলেন। উপল ইসলামের মামা প্রবাল চৌধুরী। মা উমা চৌধুরী। আত্মীয়-স্বজন তার গায়কিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তাদের পরিবারটাও তেমনই। হিপ-হপের ভেতর তাদের উত্তরাধিকার দেখতে ভাল লাগে।
‘সখি, বরষার জল আত্মমগ্ন’
উপল ইসলাম তার বাবার মত নন। অন্তত লিরিকের দিক থেকে। তার ফার্স্ট অ্যালবাম ‘কে তুমি’ (২০০১) বের হয়েছিল সিএমভি থেকে। এটা মূলত অসুখী একটা অ্যালবাম। না শ্রোতা সুখী, না গায়ক সুখী। তারও অনেকদিন পর বেঙ্গল মিউজিক থেকে আসে ‘দ্য মিরাকল-১’ (২০১০)। ততদিনে তিনি মিউজিকের ওপর ভয়েজ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। গাইলেই মনে হয় গায়ক। মুখ থেকে কিছু বের হলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।
‘আষাঢ় মাসে আমার চোখে জমেছিল মেঘ’
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, যেই মেইনস্ট্রিম মিউজিকের ওপর বাংলাদেশে একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে আছে, উপল ইসলাম চাইলে সেখানে নিজেকে ব্র্যান্ড বানাতে পারতেন। একটা ফেস হতে পারতেন। তিনি হননি। ভাবেননি হয়তো। কয়েকবছর পর সেই জায়গা নিলেন মিনার রহমান। তিনিও সিঙ্গার-সংরাইটার। তিনিও চট্টগ্রামের। তার স্যাক্রিফাইস আরেকদিন। অন্য কোনো লেখায় লিখতে হবে। এই লেখায় শুধু উপল ইসলাম।
‘জলজ দর্পণে দেখি তোমারই মুখ অবিকল’
২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জি সিরিজের সিস্টার কনসার্ন অগ্নিবীণা থেকে বেরোয় ‘এখন আমি’। এটা সুমন-আনিলার গাওয়া, ফুয়াদের মিউজিক করা একটা অ্যালবাম। কিছুটা লাতিন, কিছুটা জ্যাজ। এই অ্যালবামেরই একটা গান ‘তীর্যক’। উপল ইসলামের লেখা ও সুর করা। আনিলা গেয়েছেন। সেই লিরিকটা তুলে দিয়ে শেষ করছি। গানটা খুব কম মানুষ শুনেছেন (অন্তত ওই অ্যালবামের জনপ্রিয় ‘গাইবো না’ থেকে)।
‘তির্যক বাঁকা স্রোত শব্দের ক্যানভাসে
দিনমান প্রিয় সুর―দখিনা বাতাসে
কালো মেঘ জল থমথমথম
স্থির নয় মন চঞ্চল
জলজ দর্পণে দেখি―
তোমারই মুখ অবিকল।
আঁকাবাঁকা পথে ঝরা পাতা বুনো ফুলে
কান পেতে শোনা―
ঝিঁঝিঁ পোকা কথা বলে’।