অর্ধেক জনবল দিয়েই চলছে রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। ফলে পণ্যের শুল্কায়ন ও খালাসে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন ব্যবসা বাণিজ্যের গতি বাড়ছে অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমসে সেই অনুপাতে জনবল বাড়েনি। তাই যে কাজ একদিনে শেষ হওয়ার কথা সেটি শেষ হচ্ছে এক সপ্তাহে। এছাড়া প্রায় পণ্য খালাসে রাসায়নিক পরীক্ষা করতে হয়, বর্তমানে মাত্র একজন রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ করেন।
অন্যদিকে গত ১০ বছরে কাস্টমসে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সেই সাথে বেড়েছে রাজস্ব আদায়। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে প্রিভেন্টিভ কার্যক্রমের তদারকিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যবাহী কন্টেনারের কায়িক পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এই সুযোগে অনেক অসাধু আমদানিকারী মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনে খালাস করে নিয়ে যান। এতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্য মতে- গত পহেলা জুনের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, কাস্টমসে মোট এক হাজার ২৪৮টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কাজ করছেন ৬৪৭ জন। এছাড়া শূন্য রয়েছে ৬০১টি পদ। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য পদ হলো- ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণীর ২১০টি পদের বিপরীতে শূন্যপদ ৯৪টি, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪৯৭ পদের বিপরীতে শূন্যপদ ২৩১টি, তৃতীয় শ্রেণীর ৪২৩ পদের বিপরীতে শূন্যপদ ২৫৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণীর ১১৮ পদের বিপরীতে শূন্যপদ রয়েছে ২২টি।
জনবল কাঠামোতে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণীর ২১০ পদের মধ্যে যুগ্ম কমিশনার পদে ৫ জনের বিপরীতে কাজ করছেন ৩ জন, ডেপুটি কমিশনার পদের ১৬ জনের বিপরীতে কাজ করছেন ১২ জন, উপ প্রধান রাসায়নিক পদের ৩ জনের সবগুলোই শূন্য, সহকারী পরিচালক/পরিসংখ্যান পদের দুই পদের দুটিই শূন্য, সহকারী কমিশনারের ৪৭ পদের বিপরীতে শূন্য পদ ৩০টি, রাসায়নিক পরীক্ষকের দুই পদের দুটি শূন্য, সহকারী প্রোগ্রামারের দুই পদের কর্মরত আছেন দুইজন, রাজস্ব কর্মকর্তার ১১৯ পদের মধ্যে শূন্য পদ ৪৪টি, আইন উপদেষ্টা এক পদের কর্মরত আছেন একজন, আইন কর্মকর্তার দুটি পদে কর্মরত আছেন একজন, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দুটি পদে দুটিই শূন্য, পরিসংখ্যানের দুই পদে দুটিই শূন্য।
অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪৯৭ পদের মধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ৪৮৭ পদের মধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ২২১টি, সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের ৬ পদের ৬টিই শূন্য, অডিটরের দুই পদের দুটি শূন্য এবং সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দুটি পদ থাকলেও কর্মরত নেই কেউই। তৃতীয় শ্রেণীর ৪২৩ পদের মধ্যে মাস্টারের দুই পদের ২ জনই কর্মরত, কম্পিউটার অপারেটরের ২৯ পদে শূন্য পদ রয়েছে ৯টি, সাব এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (রেডিও) এক পদে কর্মরত একজন, টেলিফোন সুপারভাইজারের এক পদে কর্মরত একজন, অফিস সুপারিনটেনডেন্টের ১৩ পদে শূন্যপদ ৫টি, পরিসংখান অনুসন্ধায়কের এক পদের একটিই শূন্য, রেডিও অপারেটরের দুই পদের শূন্যপদ একটি, প্রধান সহকারী ১৫ পদের মধ্যে শূন্যপদ ৫টি, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৫ পদে ৫ জনই কর্মরত, উচ্চমান সহকারী পদে ৮১ পদের মধ্যে শূন্যপদ ৩৩টি, ক্যাশিয়রের দুই পদের শূন্য একটি, স্পীড বোট ড্রাইভার-১ পদের ২টির মধ্যে দুটিই শূন্য, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের এক পদে একটিই শূন্য, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৬৩ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫৮টি, সাব ইন্সপেক্টর পদের ১৭টির মধ্যে ১৪টি শূন্য, ড্রাইভার পদের ৪৭টি মধ্যে ৭টি শূন্য, টেলিফোন অপারেটর পদের ৩টির মধ্যে দুটি শূন্য, ইলেক্ট্রিশিয়ানের একটি পদে একটিই শূন্য, সিপাই পদের ১৩৫ পদের মধ্যে ১১৫টিই শূন্য। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর ১১৮ পদের মধ্যে ল্যাব এটেনডেন্টের ৩ পদে কর্মরত ৩ জন, কার্পেন্টারের ১ পদে কর্মরত একজন, গ্রীজারের ৪ পদে শূন্যপদ একটি, রেকর্ড সাপ্লাইয়ারের এক পদের একটিই শূন্য, অফিস সহায়ক ৯০ পদের ৬টি শূন্য, কুকের ২ পদের দুটিই শূন্য, লস্করের দুই পদের একটি শূন্য, ঝাড়ুদার/ক্লিনার/সুইপার পদের ৭ পদের মধ্যে শূন্যপদ ৫টি এবং মালী পদের ৮টির মধ্যে শূন্যপদ রয়েছে ৬টি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসের দীর্ঘ সময় ধরে জনবল সংকট চলছে। বিদ্যমান জনবল দিয়েই আমাদের নিয়মিত কাজ করা কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ দিন দিন ব্যবসা বাণিজ্যের পরিধি বাড়ছে। জনবলের চাহিদাপত্র দিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দিয়েছি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য যদি ১০০ গুণ স্পিডে বাড়ে, বন্দর কাস্টমসে এগোতে হবে ১৫০ গুণ স্পিডে। জনবল সংকটের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করেছি। জনবল বৃদ্ধি করে কাস্টমসের কার্যক্রম গতিশীল না করলে ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাহত হবে, এটিই স্বাভাবিক। তাই কাস্টমসে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।