মনের ওপর চাপ কমাতে করণীয়

শতদল বড়ুয়া | বৃহস্পতিবার , ১৭ জুন, ২০২১ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

দুইবেলা দুইমুঠো অন্ন যোগাতে দিন গুজরান হয়ে যায় ভাবনা করবো কোন সময়? তাছাড়া খালি পেটে ভাবনায় মন স্থির থাকে না। একজন অন্যজনকে ভাবনার সুফল বোঝাতে চেষ্টা করছিলো এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। সামাজিক বিধিবদ্ধ নিয়ম পালন করার জন্যে আমিও গিয়েছি সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। তাদের কথোপকথন শুনে সেখানে দাঁড়াতেই প্রথম লোকটি অন্নের জন্যে ছুটে গেলো।
লোকটি ট্যাঙিচালক। এক পরিবারকে সেখানে এনেছিলো। কারণ সেখানে ভাবনা (মেডিটেশন) কোর্সও চলছিলো। ট্যাঙিচালক এতো লোক সমাগম দেখে জানতে চাইলো ঐ পরিবার থেকে, এখানে কিসের আয়োজন? সুপ্রিয় পাঠক, বর্তমান সমাজে যা অবস্থা বিরাজ করছে সেই দিক দিয়ে চিন্তা করলে ট্যাঙিচালকের জানতে চাওয়াটা সঠিক। খেটে খাওয়া দিনমজুরদের ভাবনা (মেডিটেশন) করার তেমন সুযোগ কই? যাদের অন্নের চিন্তা নেই, পারিবারিক ঝামেলা নেই, সুখে যাদের দিন কাটছে তারাই ভাবনা (মেডিটেশন) কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারে।
মেডিটেশন বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। তবুও চর্বিত চর্বণ করছি ভাবনা কোর্স মানুষের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা সবসময় নানা টেনশনে ভুগি। দিন দিন টেনশন দানবটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেনশন দূর করতে হলে মেডিটেশন বা ভাবনা করার যুঁতসই কারণ রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী ভাবনা কোর্সে অংশগ্রহণ না করে টেনশনমুক্ত থাকার জন্য এক ঘন্টা বা আধঘন্টার ভাবনা আমরা নিজেরা করতে পারি। অতিরিক্ত টেনশন নিজেই একটি রোগ। পরবর্তীতে এটা আরো নানাবিধ রোগবালাই টেনে আনে।
টেনশনে ঘুম হয় না, ব্রেইন ঠিকমতো রেস্ট পায় না। এধরনের কিছু কিছু কারণে আমাদের অনেক সময় বদহজমও হতে পারে। হার্টের নানা সমস্যা দেখা দেয় একমাত্র টেনশনের কারণে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আগে এবং ওষুধ সেবন না করে ঘরে বসে চেষ্টা করে দেখতে পারি টেনশনমুক্ত থাকার জন্য। টেনশনমুক্ত থাকা মানে রোগমুক্ত থাকা। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের উপর আরেক টেনশন ভর করছে।
প্রতিদিন সংসারের নানা দুঃশ্চিন্তা আমাদের লেগেই আছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে যোগব্যায়াম বা ধ্যান খুবই একটি পরিচিত বিষয়। আধুনিক যুগে চিকিৎসকরা এর নাম দিয়েছেন ‘মেডিটেশন’। এটি আপনার মনকে রাখবে শান্ত, শরীরকে রাখবে ফুরফুরে। ঘরে বসে আমরা এঅভ্যাসটা করতে পারি। শুয়ে বসে, যেভাবে ইচ্ছে করা যায়। প্রথমে মন ও শরীরে শিথিলভাব আনুন, চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন, মাথা-পা একই রেখা বরাবর রেখে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকুন। মাথা থেকে সব চিন্তা দূর করুন। এভাবে যদি পারা না যায় তাহলে একশ’ থেকে এক পর্যন্ত উল্টো দিকে আমরা গুনতে পারি। এতেও যদি আমরা ফেল মারি তা হলে যার যার ধর্মীয় বিধিবিধান মতে বলতে পারি–“হে মহান দয়াময় আমার মন থেকে খারাপ এবং দুঃশ্চিন্তা অপসারিত করে আমার উপর শান্তি বর্ষিত করুন। “এভাবে নীরবে আধঘন্টা করা গেলে মনের অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে। এতে নিজেকে সতেজ অনুভূত হবে।
যারা নিয়মিত নামাজ/প্রার্থনা করেন তাদের জন্য এ ব্যবস্থা আরো সহজ। নামাজে ও প্রার্থনায় মন শান্ত থাকে, নিজের মধ্যে এক উৎফুল্ল ভাব জাগ্রত হয়। মাথায় শুধু থাকে একজন “মহাশক্তিশালী” অদৃশ্যভাবে সামনে আছেন। তিনি দেখছেন ও শুনছেন। এসময় মাথা, শরীর ও মনের মনেযোগ একই কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তাই সর্বশেষ প্রার্থনায় যখন মনের সব কথা বলবেন তখন আপনা-আপনি নিজের উপর আস্থা ফিরে আসবে। অদৃশ্যভাবে দয়াময় সাহায্য করবেন এই ভেবে আপনি হালকাবোধ অনুভব করবেন।
বিপদে যখন কেউ এলো না সাহায্য করতে, রোগ শয্যায় যখন সকলে আশা ছেড়ে দিলো তখন কি করবেন ? ঐ সময়ে টেনশন কিন্তু অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরবে। ইবাদত বা প্রার্থনায় টেনশনকে অপসারিত করা গেলে সব সমস্যার উপস্থিত সমাধান হয়েছে এরকম মনে হবে। যেভাবে কাউকে প্রকাশ করতে পারছেন না, প্রার্থনায় তা বললে মন থেকে ‘চাপ’ দূর হবে, মন হবে হালকা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসার কদম ফুল
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল