করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সরাসরি ও অনলাইনে নেওয়া যাবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সে হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে।
দৈনিক আজাদীতে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগের একাডেমিক পরীক্ষাগুলো সশরীরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ সময়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসমূহ ও শাটল ট্রেন বন্ধ থাকবে। করোনার কারণে স্থগিত এবং অনলাইনে সম্পন্ন হওয়া বর্ষগুলোর পরীক্ষা নিতে পারবে। স্ব স্ব বিভাগ সংশ্লিষ্ট ডিন অফিস এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার সাথে যোগাযোগ করে তারিখ জানাবেন। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপ-উপাচার্য বেনু কুমার দে বলেন, অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সব পরীক্ষায় সশরীরে নেব, যদি ক্লাস সম্পন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি, বিভাগীয় সভাপতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রক্টর সমন্বয় করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবেন এবং পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, অসমাপ্ত পরীক্ষার ব্যাপারে সশরীরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষাগুলো সশরীরে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে স্ব স্ব বিভাগ ডিন অফিস ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার সাথে যোগাযোগ করে পরীক্ষার তারিখ জানাবে। এ সময় আবাসিক হলসমূহ এবং শাটল ট্রেন আগের মতোই বন্ধ থাকবে। তবে ভাইভা পরীক্ষায় এঙটার্নাল সরাসরি না এলে অনলাইনে যুক্ত হতে হবে।
এ কথা বলা বাহুল্য যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আমাদের সব কিছুকে স্থবির করে দিয়েছে। করোনার আক্রমণে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ এ দুর্যোগে পৃথিবী বিপর্যস্ত। সর্বত্র যে কর্মব্যস্ততা ও প্রাণচঞ্চলতা ছিল, তা স্থবির হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনও অদৃশ্য এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভীতি সঞ্চার করেছে জনমনে। করোনা যেমন দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জনজীবনের উপর প্রভাব ফেলেছে, তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থাকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ৭৭ কোটি ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত করছে এই ভাইরাসটি। যদিও ‘অনলাইন ক্লাস’ শিক্ষাব্যবস্থার এ সংকট থেকে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা পরিস্থিতি যেমনই হোক, মানুষের মধ্যে আগের আতঙ্ক এখন নেই। স্বাভাবিক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে দেশের সব কার্যক্রম। বলা যায় এখন উন্নতির দিকে। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এবং নিজ নিজ একাডেমিক কাউন্সিলের ভিত্তিতে সশরীরে এসব পরীক্ষা নেওয়া যাবে। তাঁরা বলেন, করোনার এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য পরীক্ষাও মূল্যায়ন করতে হবে। পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।
একটা বেসরকারি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ঘরে বসে থাকে না। তারা নানা রকম কাজে সময় কাটায় বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখেও তাদের ঘরে আটকে রাখা যায়নি। ওরা করোনার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞাত এবং নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হবে কীভাবে- তাও অবগত। শিক্ষার্থীরা মানসিক হতাশা ও উদ্বিগ্নতায় ভুগছে। কারণ করোনা মহামারি না থাকলে এতোদিনে তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ হয়ে যেতো। একাডেমিক পর্ব শেষ না হওয়ায় ও সার্টিফিকেট না থাকায় এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছে না। অতএব, তাদের আজেবাজে কাজে সময় ব্যয় করা থেকে ফিরিয়ে এনে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী করা আমাদের দায়িত্ব। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষা গ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা দরকার। আমরা আশা করবো, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে।