১৫ হাজার টন লো সালফার মেরিন ফুয়েলের দ্বিতীয় চালান গুপ্তখালে

জটিলতা কাটিয়ে নিয়মিত হচ্ছে সমুদ্রগামী জাহাজের জ্বালানি আমদানি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৬ জুন, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

চলতি সপ্তাহে আসা ১৫ হাজার টনের লো-সালফার মেরিন ফুয়েলের দ্বিতীয় চালান ইতোমধ্যে পতেঙ্গা গুপ্তখালস্থ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তিন বিতরণ কোম্পানির ট্যাংকে খালাস হয়েছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ১৫ হাজার টনের প্রথম চালান আসার পর জটিলতা তৈরি হওয়ায় দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর দ্বিতীয় চালানটি আসে। এর মাধ্যমে নিয়মিত হতে যাচ্ছে সমুদ্রগামী জাহাজের জ্বালানি হিসেবে লো-সালফার মেরিন ফুয়েল আমদানি। এতে করে সমুদ্রগামী জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে পথ খুলল।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েলের দ্বিতীয় চালান নিয়ে চট্টগ্রামে আসে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ক্রুড অয়েল ট্যাংকার এমটি চ্যামট্রান্স রোজেন। গত ৮ জুন এটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। গত ১১ জুন খালাস শেষে জেটি ত্যাগ করে জাহাজটি। পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ট্যাংকে এসব জ্বালানি খালাস করা হয়। জানা যায়, বাংলাদেশের বন্দরে যাতায়াতকারী সমুদ্রগামী জাহাজে দীর্ঘদিন ধরে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং সুবিধা ছিল। বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের চেয়ে আমাদের দেশে বাঙ্কারিংয়ে জ্বালানির দাম বেশি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিদেশি জাহাজগুলোতে বাঙ্কারিং বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক নৌ-নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) বিশ্বব্যাপী সমুদ্রগামী জাহাজের সালফার নিঃসরণ কমানোর জন্য তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ (৩.৫০%) সালফার ফুয়েল অয়েলের পরিবর্তে লো-সালফার হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) হিসেবে দশমিক ৫ শতাংশ (০.৫০%) মেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিং করার নির্দেশনা দেয়। ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ‘বাংলাদেশের জলসীমায় যাতায়াতকারী দেশি বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে জ্বালানি সরবরাহের জন্য বাঙ্কারিং নীতিমালা’ গেজেট প্রকাশ প্রকাশ করে।
এরপর গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শুরুতে দেড় লাখ টন মেরিন ফুয়েল আমদানির পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। কিন্তু নানান জটিলতা কাটিয়ে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থাই জাহাজ ‘এমটি টিএমএন প্রাইড’ ১৫ হাজার টন মেরিন ফুয়েল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ১৬ সেপ্টেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির বন্ডেড ট্যাংকে খালাস নেওয়া হয়। খালাসের পর এসব মেরিন ফুয়েলের কাস্টমস ছাড়পত্র নিতে গেলে বিপত্তি তৈরি হয়। এসময় বিপিসি শুল্কমুক্ত সুবিধায় শুল্কায়ন করতে চাইলে নীতিমালায় ‘শুল্কযুক্ত’ থাকার কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড়পত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে প্রায় ৫ মাস জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে চিঠি চালাচালি এবং কয়েক দফা বৈঠকের পর ‘শুল্কমুক্ত’ করে বাঙ্কারিং নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত আসে। এরপর জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এনবিআরকে চিঠিও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রণালয় বিদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা রেখে লোকাল (স্থানীয় নৌ-পথে চলাচলকারী) জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে শুল্কযুক্ত সুবিধায় মেরিন ফুয়েল বিপণনের বিষয়ে নীতিমালা সংশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। সংশোধিত নীতিমালায় বিদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও দেশি জাহাজের জন্য সে সুবিধা রাখেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। দেশিয় জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে শুল্কযুক্ত হিসেবে বিল পরিশোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। পরবর্তীতে জটিলতার নিরসনের পর নির্ধারিত সরবরাহকারীদের মাধ্যমে সমুদ্রগামী জাহাজে বাঙ্কারিং সরবরাহ শুরু করে বিপিসি। প্রথম চালানের ১৫ হাজার মেট্রিক টন শেষ হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিতীয় চালান আসে।
বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিদেশগামী জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে এখন আর কোন জটিলতার নেই। প্রথম চালান আসার পর শুল্কায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে এ জটিলতা কেটে গেলে আমরা বাঙ্কারিং সরবরাহ দিয়েছি। এখন আরও ১৫ হাজার টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েল আমদানি করা হয়েছে। আশা করছি এখন থেকে মেরিন ফুয়েল আমদানি নিয়মিত হবে। এতে লো-সালফার মেরিন ফুয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে সমুদ্র দূষণ কমার পাশাপাশি এখাতে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০০ ভ্যাকসিনের ভায়াল ১০ কিমি দূরের গন্তব্যে পৌঁছাবে ড্রোন
পরবর্তী নিবন্ধইছামতী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পাউবোর নোটিশ