বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত এখন শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। সেখানে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে ঝাউবন। গত ৮ জুন ‘পারকি সৈকতে বিপন্ন পরিবেশ, আটকে পড়া জাহাজে জমছে পলি বিলীন হচ্ছে ঝাউবন’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পর্যটন শিল্পের প্রসার ও জনপ্রিয়তা বিবেচনায় পারকির উন্নয়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চলছে ৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও হাজারো পর্যটকে মুখরিত থাকে পারকি। এই সৈকতের মূল সৌন্দর্য সারি সারি ঝাউ গাছ। কিন্তু ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোড়ায় ভেসে আসা ক্রিস্টেল গোল্ড জাহাজ সৈকতে আটকা পড়লে পরিবর্তিত হয়ে যায় জোয়ারের পানির গতিপথ। এ কারণে ৪ বছর ধরে বালির স্তর সরে গিয়ে পলি মাটিতে ভরে গেছে সৈকত। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জোয়ারের প্রভাবে কয়েকশ ঝাউ গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে ঝাউবন। চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মফিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোড়ায় ভেসে আসা জাহাজ ক্রিস্টেল গোল্ড আটকে গেলে পারকি সৈকত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধ অমান্য করে জাহাজটি কাটতে যায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরবর্তীতে আপিল বিভাগও জরিমানা বহাল রাখে। এরপর হাই কোর্টে আবারো রিটের আপিল করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে মামলাটি ঝুলে আছে’।
প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে প্রকৃতি নির্ভর জীবন পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। নানা বৈচিত্র্য মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, অকৃপণ জলরাশি, বন পাহাড়, ভূসর্গিক সমাহার পাশ্চাত্যের পর্যটকদের এমন আকৃষ্ট করেছে। এই শিল্পকে লুফে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, নেপাল, মালদ্বীপ, যেসব দেশ কঠোর রক্ষণশীল বলে পরিচিত ছিল। এ শিল্পের ভবিষ্যত বুঝতে পেরে অপেক্ষাকৃত নমনীয়ভাব ভাব প্রদর্শন করছে। যেমন-চীন, ভিয়েতনাম ও মায়ানমার। বর্তমানে তারা বাস্তবতা উপলব্ধি করেছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ভ্রমণ আগের চেয়ে সহজ হয়ে উঠেছে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ায় সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে পর্যটন শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। পর্যটন আকর্ষণ করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই বলে সেই শিল্পের বিকাশ ঘটছে না। অথচ পৃথিবীর বহু দেশ কেবল পর্যটনশিল্পের আয়েই উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ খাত এখনো অবহেলিত। সেজন্য পর্যটনখাতের বিকাশে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যাগের অভাব রয়েছে।এ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশীয় পর্যটনখাতকে বেশি করে ফোকাস করতে হবে। তাহলে দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরাও এতে আকৃষ্ট হবে।
সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও চেষ্টা সত্ত্বেও দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা যায়নি, যা নিতান্তই দুঃখজনক। এজন্য মূলত আন্তরিকতার অভাবই দায়ী। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কখনই পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব উপলব্ধির চেষ্টা করেননি। ফলে সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও এ খাত থেকে আমাদের প্রাপ্তির পরিমাণ সামান্যই রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রথমত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও পরিবর্তন জরুরি।
শহরের প্রান্তসীমায় অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকতের সম্ভাবনা প্রচুর। যদিও নানা অবহেলায় সৈকতের বালুচরে পলি মাটি জমে গেছে, ঝাউ বাগান উজাড় হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত। এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও অগ্রগতি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যটন খাত চাঙ্গা করতে সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার বাস্তবায়ন জরুরি।