১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, ধ্বংসযজ্ঞ, মানবজাতির উপর বিভীষিকা, নিরীহ মানুষ হত্যা, হিরোশীমা ও নাগাসাকিতে মারণাস্ত্রের নিষ্ঠুরতা দেখে যাঁরা পৃথিবীর বুকে শান্তির বাণী প্রচার করতে চেয়েছিলেন এদের মধ্যে বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন অগ্রগণ্য। জাপানের হিরোশীমা-নাগাসাকিতে আনবিক বোমা বিস্ফোরণের পর অনেকের মতো তাঁরাও অনুভব করতে পেরেছিলেন সমস্ত মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।
দু’জনেই নোবেল জয়ী। বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন জার্মানির উলম নামক একটি ছোট্ট শহরের এক ইহুদি পরিবারে ১৯৭৯ সালের ১৪ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন শহরে আমেরিকান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। আইনস্টাইন মোট বেঁচেছিলেন ৭৬ বৎসর। অপর দিকে বিশ্বখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল ইংল্যান্ডের মন্মথশায়ারের ট্রেলাক গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান পরিবারে ১৮৭২ সালের ১৮ই মে জন্মগ্রহণ করেন। অগাধ পাণ্ডিত্য, প্রখর যুক্তিবোধ, অসাধারণ মনীষা ও অপূর্ব রচনাশৈলীর এই মহান দার্শনিক ১৯৭০ সালের ২রা ফ্রেবুয়ারি ৯৭ বৎসর বয়সে ওয়েলস ক্যায়নার কনশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন। আইনস্টাইন নোবেল প্রাইজ পান ১৯২২ সালে। ১৯২১ সালের নোবেল প্রাইজ ১৯২২ সালে ঘোষিত হয়। ১৯১০ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ৭ (সাত) বার আইনস্টাইনের নাম নোবেলের জন্য উঠে আসে। কিন্তু বার বারই ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কোন তত্ত্বই নয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট উপর নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়। সেই ইফেক্ট ও আপেক্ষিকতাবাদ ১৯০৫ সালে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। উল্লেখ্য নোবেল প্রাইজ গ্রহণ করার জন্য আইনস্টাইন স্বশরীরে উপস্থিত হননি। সেই সময় তিনি জাপানে লেকচার ভ্রমণে ছিলেন। নোবেল প্রাইজের বিষয়টি ছিল, “ঝবৎারপবং ঃড় ঃযব ঃযবড়হু ড়ভ ঢ়যুংরপং, বংঢ়বপরধষষু ভড়ৎ ঃযব ষধ িড়ভ ঢ়যড়ঃড় বষবপঃরপ বভভবপঃ”। অনেক বিশেষজ্ঞ অভিমত দিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় বিভিন্নমুখী গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য আইনস্টাইনের কমপক্ষে ৭ (সাত) বার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। প্রায় ১৯১০ সাল থেকেই যখনই নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা চিন্তা করছিলেন ততবারই নোবেলের ঘোষণার মধ্যে সংশয় দেখা যায়। আলফ্রেড নোবেল বলে গিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাবেন আবিষ্কারক আর সেই আবিষ্কার যেনো মানুষের কল্যাণে লাগে। আইনস্টাইনের বেলায় বিতর্ক দেখা দিল তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব যুগান্তকারী হলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা মানুষের কোনো কাজে লাগবে না। আশ্চর্য হবার কথা তো বটেই। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। সমস্ত আবিষ্কার ও গবেষণায় শুধুমাত্র কাগজ কলমই ছিল সম্বল। আর সঙ্গে ছিল বেহালা। পরে বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন মাধ্যাকর্ষণের কারণে আলোর পথ বেঁকে যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আইনস্টাইন ‘একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব’ এর উপর কাজ করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, আপেক্ষিক তত্ত্বের পাণ্ডুলিপি নিলামে উঠেছিল ৬৮ লাখ ডলারে। আইনস্টাইন ঐ ডলার যুদ্ধ ফান্ডে দান করেছিলেন। সেই আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য তিনি নোবেল পাননি। দুঃখ কোথায় রাখা যায়। আইনস্টাইনের আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার কমিটি প্রতিবারই মনোনয়ন দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন কমিটির প্রভাবশালী সদস্য জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ফিলিপ লেনার্ড বরাবরই বিরোধিতা করেছেন। শেষ পর্যন্ত নোবেল কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ১৯২০ সালে শুধুমাত্র আইনস্টাইনকে নোবেল দেয়ার জন্য একটা বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দেখা গেলো সেই বিশেষ কমিটির বিচারকরাও আইনস্টাইনের জটিল গাণিতিক গবেষণাপত্রগুলো বুঝতেই পারছেন না। ১৯২১ সালে আইনস্টাইনকে নোবেল দিতেই হবে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর যে তত্ত্বটা কিছুটা সহজে বোঝা যায় সেই ১৯০৫ সালের ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট (আলোক-তড়িৎ ফল) এর জন্য নোবেল দেয়া হয় আইনস্টাইনকে। তাও আবার ঘোষিত হয় ১৯২২ সালে। একই সালে পদার্থবিদ নিল্ বোহরকেও নোবেল দেয়া হয়। সেটি ১৯২২ সালের জন্য। নোবেল কমিটির এই সব কাণ্ডকারখানা শুনলে কে না অবাক হয়ে পড়ে। আইনস্টাইনের গাণিতিক গবেষণা নোবেল বিজয়ীরা বুঝতে পারেননি। কি তাজ্জব ব্যাপার।
এবার আসি দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নোবেল পুরস্কার নিয়ে তথ্য সম্পর্কে। রাসেল সারা জীবনে ৭৫টির উপর বই লিখেছেন। প্রায় ৮ বছর যাবৎ (১৯০২-১৯১০) প্রফেসর হোয়াইট হেড এর সঙ্গে যৌথবাবে গবেষণা করে প্রকাশিত হয় প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা যা ছিল গণিত সম্পর্কীয় যুগান্তকারী রচনা। গণিতের ইহা একটি অমূল্য গ্রন্থ, এর আগে ১৯০৩ সালে ‘অংক শাস্ত্রের নীতি’ (ঞযব চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ গধঃযবসধঃরপং) প্রকাশ করেন। অংক শাস্ত্রের ভিত্তির উপর রচিত এই কাজ। এতে তিনি প্রমাণ করেছেন অংক শাস্ত্র এবং যুক্তিবিদ্যা এক এবং অভিন্ন। এই বই দু’টির মাধ্যমে রাসেল এই ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেন।
রাসেল ছিলেন যুদ্ধ বিরোধী। প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাসেলকে জরিমানা দিতে হয়েছিল। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে যুদ্ধ বিরোধী প্রকাশনায় আমেরিকার বিরুদ্ধে লিখায় রাসেলকে ৬ (ছয়) মাস জেল খাটতে হয়েছিল। এর ফলে ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদটি হারান। কারাগারে বসেই রাসেল “ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় গধঃযবসধঃরপধষ চযরষড়ংযড়ঢ়ু” বইটি লিখেন। জীবন চলার পথে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯২৯ সালে রাসেল জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত বই “গধৎৎরধমব ধহফ গড়ৎধষং” অর্থাৎ ‘বিবাহ ও নৈতিকতা’ প্রকাশ করলেন। এই বইয়ের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে অধ্যাপক পদে গ্রহণ করেননি।
একজন বিশপ বিচার বিভাগে রাসেল ধর্ম ও নৈতিকতা বিরোধী বলে অভিযোগ আনলেন এবং এ জন্য বিচারক রাসেলকে অভিযুক্ত করেন। বিচারক রায় দিলেন রাসেল যা লিখেছেন তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মা বললেন রাসেলের মত মানুষ শিক্ষক হলে আমার মেয়ের সর্বনাশ হবে। এ প্রসঙ্গে আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন যে এই সুন্দর পৃথিবীতে যাজকেরাই মানুষকে বার বার উত্তেজিত করে আর প্রতিভাবানরা হয় নির্বাসিত। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের দিকে তাকালে ধর্ম ব্যবসায়ীদের তাণ্ডব দেখলে আইনস্টাইনের কথা বার বার মনে পড়ে এবং আমরা গভীরভাবে তা উপলব্ধি করতে পারি। রাসেলের দেয়া উইলিয়াম জেমস্ স্মারক বক্তৃতাগুলোই সংকলন করে “পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস” বইটি রচিত হয় যেটি ছিল যাবৎকালের পাশ্চাত্য দর্শনের উপর যতগুলো বই লিখা হয়েছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বই। অথচ এইসব বক্তৃতা মোটেই উন্নতমানের নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। যেমনি বলা হয়েছিল আইনস্টাইনের বেলায় ১৯৪৮ সালে “ঐঁসধহ কহড়ষিবফমব; রঃং ংপড়ঢ়ব ধহফ ষরসরঃব” নামক আরেকটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
যেই গধৎৎরধমব ধহফ গড়ৎধষং এর জন্য রাসেল সর্বত্র সমালোচিত হলেন ১৯৫০ সালে সেই বইয়ের জন্যই বার্ট্রান্ড রাসেলকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো। আশ্চর্য তো হতেই হয়। ঞযব ঘড়নবষ ঋড়ঁহফধঃরড়হ বরঃধঃরড়হ এ লিখেছেন যে “ঞযব ঢ়ৎরুব ৎবপড়মহধরুবফ যরং াধৎরবফ ধহফ ংরমহরভরপধহঃ ৎিরঃরহম রহ যিরপয যব পযধসঢ়রড়হং যঁসধহরঃধৎরধহ রফবধষং ধহফ ভৎববফড়স ড়ভ ঃযড়ঁমযঃ, হড়ঃ ভড়ৎ ধহু ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ ড়িৎশ” অর্থাৎ মানবতার আদর্শ ও মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্রে একজন অগ্রগামী সৈনিক হিসেবে তাঁর বিভিন্ন মুখী ও গুরুত্বপূর্ণ লেখনীর জন্য এই নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো, কোনো একটি বিশেষ কাজের জন্য নয়। সারাটা জীবন রাসেল মানবতার আদর্শ লালন করেছেন এবং মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করেছেন। রাসেলকে যেমন চৎরহপরঢ়রধ গধঃযবসধঃরপং এর জন্য নোবেল দেয়া হয়নি, তেমনি যুগান্তকারী আবিষ্কার আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য আইনস্টাইনকেও নোবেল দেয়া হয়নি।
আইনস্টাইন ও রাসেল দুই দিকপালই ছিলেন ঘোরতর যুদ্ধ বিরোধী। আইনস্টাইন ১৯৩০ সনে “ডযু ডধৎ” বইতে আইনস্টাইন ও সিগমন্ড ফ্রয়েডের মধ্যে পত্রালোচনা ছাপানো হয়। “ঞযব ঋরমযঃ অমধরহংঃ ডধৎ” বইতে আইনস্টাইনের যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন, লিখা, বক্তৃতা বিবৃতির সংকলন ছাপানো হয়। পরবর্তী বৎসর সমূহে আইস্টাইন শান্তির উপর অনেক বক্তব্য দেন।
১৯৫০ সালে এসে বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেল পুরস্কার পাবার পর আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেড়ে যায়। আইনস্টাইনের স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন হিরোশীমা নাগাসাকিতে এটম বোমার বিধ্বংসী রূপ দেখে আইনস্টাইন খুবই বিচলিত হয়েছিলেন এবং এটাই স্বাভাবিক কারণ এটার হোতা তো তিনি এবং তাঁর ঐ একটা চিঠি। তিনি লিখেছেন, পারমাণবিক শক্তি মানব জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে সে রকম মনে হয় না। এই শক্তি মানবজাতির প্রকৃত ভয়ের কারণ হয়তো পরোক্ষভাবে তা ভালোই করবে। ভয় ছাড়া মানবজাতি তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা চালু করবে। ভয় ছাড়া মানুষ বোধহয় কখনোই শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।
১৯৪৭ সালে আইনস্টাইন জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্ব সরকার গঠনের পক্ষে মত দেন বিশ্বব্যাপী মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সুস্পষ্ট মত দেন। ১৯৪৮ সালে আইনস্টাইনের শরীর ভেঙ্গে পড়ে। আইনস্টাইন চিলেন মহাত্মা গান্ধীর সমর্থক। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন আইনস্টাইনের শান্তির নায়ক। ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারি নাথুরাম ঘটছে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করে। উল্লেখ্য যে, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মহাত্মা গান্ধীর নাম পাঁচবার প্রস্তাবিত হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি১৯৪৮ সালে কাউকেও নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়নি। বস্তুতপক্ষে আইনস্টাইন, রাসেল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মাগান্ধী এসময়কালের বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব যাঁরা শান্তির স্বপক্ষে প্রতিনিয়ত তাঁদের সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন।
ইতোমধ্যে “রাসেল-আইনস্টাইন মেনিফেস্টো” তৈরি হল এবং আইনস্টাইন ১৯৫৫ সালের ১১ই এপ্রিল এই মেনিফেস্টোতে সহি করেন এবং ১৮ই এপ্রিল আইনস্টাইন মহাপ্রয়াণ করেন। আইনস্টানের ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর দেহকে পোড়ানো হয় এবং দেহভস্ম দেলোয়ার নদীতে ছিটিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যুর পর একজন প্যাথোলজিন্ট উৎ. ঐধৎাবু আইনস্টাইনের ব্রেইনটি ব্যবচ্ছেদ করে রেখে দেন। আরেকজন চক্ষু ডাক্তার আইনস্টাইনের চোখ দু’টি নিয়ে নেন। আইনস্টাইন নেই, কবিগুরু নেই, মহাত্না গান্ধী নেই। রাসেল একা। তারপরও দার্শনিক রাসেল থেমে নেই। ঐ মেনেফিেস্টোতে ১১ জন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি সহি করেছিলেন। রাসেল ১৯৫৫ সালের ৯ই জুলাই ঐ মেনিফেস্টো বিশ্বজনতার সামনে উপস্থাপন করলেন যুদ্ধ নয় শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালানোই হবে উত্তম পন্থা।
এই মেনিফেস্টোর কথা কেউ কর্ণপাত করেছে বলে মনে হয়নি। অস্ত্র প্রতিযোগিতা, রাজনীতি এমন জিনিস যা রাষ্ট্র ও ব্যক্তিকে অন্ধ করে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছে তা আজো অব্যাহত। মূলত: পৃথিবীতে শান্তিবাদী নেতৃত্ব বলতে সক্রিয়ভাবে বার্ট্রান্ড রাসেলই বেঁচে আছেন। পৃথিবী থেকে পারমানবিক অস্ত্র নিশ্চিহ্ন করার জন্য গঠিত হল “ঈধঁরঢ়ধরমহ ভড়ৎ ঘঁপষড়ধৎ উরংধৎসধসবহঃ (ঈঘউ)”। রাসেল হলেন এর সভাপতি। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে এই সংস্থা গঠিত হয়। ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৃটেন, আমেরিকা ও রাশিয়ার রাষ্ট্র প্রধানকে অহেতুক পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অংশ না নেয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন কিন্তু তাঁরা কেউ রাসেলের ডাকে সারা দেননি। রাসেল তাঁর ৯০ বৎসর বয়সে গঠন করলেন “বার্ট্রান্ড রাসেল পিস ফাউন্ডেশন”। রাসেল তাঁর জীবনের উপার্জিত অর্থ তুলে দিলেন এই ফাউন্ডেশনে। রাসেল ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন এবং লিখলেন ‘ওয়ার ক্রাইম ইন ভিয়েতনাম’। দার্শনিক রাসেল প্রতিবাদী, যুক্তিবাদী, জ্ঞান সন্ধিৎসু অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। মানবদরদী অসাধারণ মনীষার ছাপ দিয়ে মানবজাতির সামনে রেখে গেলেন অবিস্মরণীয় অবদান।
আইনস্টাইন ও রাসেল দু’জনেই জীবদ্দশায় পরমাণুমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং বিশ্ব শান্তি স্থাপনে তাঁদের অবদান বিশ্ববাসী কোনোদিন ভুলবে না। এই দুই মহান ব্যক্তির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষবিদ, প্রাবন্ধিক, চ.বি এর পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।