সংবিধানে এনআইডি সেবার বিধান অন্য কাউকে দেয়া হয়নি

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ইসির চিঠি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৯ জুন, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে এ ব্যাপারে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে অন্য কোনো মন্ত্রণালয় বা সংস্থাকে ভোটার তালিকা করা, হালনাগাদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার এই চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে এ চিঠিতে। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কনসার্ন তুলে ধরা হয়েছে; সেই সঙ্গে কমিশনের কাছে কার্যক্রম রাখার জন্য বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ১১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছে। ভোটার তালিকার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজটিও হয় ইসির মাধ্যমে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।
এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক চিঠি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তা নিয়ে আপত্তি ওঠে ইসিতে। তা আগের মতোই ইসির অধীনে রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনা দেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। চিঠিতে গত ১২ বছরের বিভিন্ন কার্যক্রম উল্লেখের পাশাপাশি নানা যুক্তি তুলে ধরা হয়।
১.তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়াগসহ বিভিন্ন কমিটির তত্বাবধানের মাধ্যমে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। একইভাবে প্রতিবছর তালিকা হালনাগাদ করা হয়।
২. বাংলাদেশের সংবিধানে অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থাকে এ ধরণের ক্ষমতা অর্পন করা হয়নি। ফলে অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থার পক্ষে সকল মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে এ ধরণের মহা কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হয় না।
৩. বর্তমান পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠানের নিকট অর্পণ করা হলে নতুন করে মাঠ পর্যায় হতে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অবকাঠামো প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রয়োজন হবে, যা ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ। ৪. জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের নিকট ন্যস্ত করা হলে সেবা প্রদান বিঘ্নিত হওয়াসহ আইনানুগ জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানালেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেই। জনগণের ভোগান্তি কমাতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল গত ২ জুন বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এক সভার পর সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে।
ইসির আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার তালিকা তৈরি এবং ভোট কাজ পরিচালনা করা। কোনো দেশে এনআইডির কাজ নির্বাচন কমিশন করে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগোল্ডেন মনিরসহ ৩ জনের ১৭০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৪৫টি চোরাই মোবাইলসহ আটক ৬