চট্টগ্রামে গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন, যা চলবে ১৯ জুন পর্যন্ত। ক্যাম্পেইনের আওতায় ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১৩ লাখ শিশুকে একটি করে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সীদের একটি করে নীল রঙের (১ লাখ ইউনিট) এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের একটি করে লাল রঙের (২ লাখ ইউনিটের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন) ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। তবে জোর করে বা কান্নারত অবস্থায় শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল না খাওয়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া ছয় মাসের কম বয়সী ও ৫ বছরের বেশি বয়সী এবং অসুস্থ শিশুকেও এই ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না।
গতকাল সকালে সদরঘাটের মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে মহানগর পর্যায়ে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জেলা পর্যায়ের ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন ঢাকার মহাখালীর জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ চট্টগ্রামের নিউট্রিশন অফিসার ডা. উবাসুই চৌধুরী, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া, ইপিআই টেকনোলজিস্ট কাজল কান্তি পাল, পরিসংখ্যানবিদ গীতাশ্রী দাশ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সম্পদ দে, স্বাস্থ্য পরিদর্শক একরামুল হক চৌধুরী, সিনিয়র স্টাফ নার্স নুরুন্নাহার, করবী দাশ, অফিস সহকারী তাপস রায় ও হিসাবরক্ষক ফোরকান উদ্দিন প্রমুখ।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী- ক্যাম্পেইনে সবমিলিয়ে মহানগর ও জেলায় প্রায় ১৩ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ক্যাম্পেইন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার জানান, মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ১ হাজার ২৮৮টি কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩১ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়াবে চসিক। এর মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ৭৯ হাজার ৭৬১। আর ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪ লাখ ৩০ হাজার ২৭০।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১৪টি উপজেলায় মোট ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৪ জন শিশুকে ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ৮৮ হাজার ৯৬০ জন। ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৪ জন। জেলার ৪ হাজার ৮০০টি কেন্দ্রে এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এ ক্যাপসুল খেলে শিশুদের সমস্যা হয় না। তবে খালি পেটে খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে। এ জন্য শিশুদের ভরাপেট অবস্থায় ক্যাপসুলটি খাওয়াতে হয়। তবে কোনো শিশু গত চার মাসের মধ্যে এ ক্যাপসুল খেলে তাকে আর খাওয়ানো যাবে না। এছাড়া অসুস্থ এবং ৬ মাসের কম বয়সী ও পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে এ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না।
রাতকানা রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করাই ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। ৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য সকল অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ড : জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন শুলকবহর সুচয়ন বিদ্যাপীঠে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সুফী, শুলকবহর বাদুরতলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার ফারুক, পাঁচলাইশ থানা আওয়ামী লীগ নেতা এমরানুল হক এমরান, শুলকবহর মহল্লা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিব সম্রাট, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদ রেজা সুজা, নেজামউদ্দৌলা, রাজিবুল ইসলাম চৌধুরী হিরা, লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য বলাই, কাউসার আলম রাজু, সমীর পাল, সোহেল আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, বিসমিল্লাহ মহিউদ্দিন, আসাদুল হক প্রমুখ।
৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড : ৩৩ নং ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন করেন মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী। কাউন্সিলর বলেন, শিশুরা যাতে অন্ধত্ব ও মৃত্যু ঝুঁকি থেকে রক্ষা পায়, সেজন্য ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়া প্রয়োজন। তিনি শিশুদের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে জাতির সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড : পাহাড়তলীতে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২১ উদ্বোধন করেন চসিক ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিল মো. জহুরুল আলম জসিম। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় চসিক ৯/এ বিশ্বকলোনী নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ৯, ১০, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর তাসলিমা নুরজাহান রুবি, মেডিকেল অফিসার ডা. গাজী হাফসা, ডা. আবু হানিফ, সচিব রুবেল কুমার শীল, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. জসিম, সি-ব্লক সমাজ উন্নয়ন পরিষদ সভাপতি মো. ইমরান সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামিম আহমেদ সুমন, জি- ব্লগ সমাজ কল্যাণ পরিষদ সভাপতি সাইদুর রহমান আরমান, সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার, এইস- ব্লক সভাপতি স্বপন দাস গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক, শ্রমিক লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন জুয়েল, আনিস চৌধুরী রাজন, আব্দুল মতিন, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।