ফেদেরিকো গার্থিয়া লোরকা- স্পেনের বিখ্যাত কবি, নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক। ছবি আঁকায় তিনি ছিলেন কুশলী, আর প্রাণে প্রাণে ছিল গান। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ শিল্পীর নাম ছিল লোরকা।
লোরকার জন্ম ১৮৯৮ সালের ৫ জুন দক্ষিণ স্পেনের এক ছোট্ট শহরে। বাবা ছিলেন জমিদার, মা চমৎকার পিয়নো বাজাতেন। লোরকার বয়স যখন এগারো, তাঁর পুরো পরিবার চলে আসেন গ্রানাডা শহরে। এটি ছিল উর্বর এক উপত্যকা। লোরকার শিল্পী জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল গ্রানাডার অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ। ১৯১৫ সালে স্কুলের পাঠ শেষ করে লোরকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং আইন, সাহিত্য ও সংগীত বিষয়ে লেখাপড়া করেন। তবে পুরো কিশোরকাল জুড়ে সাহিত্যের চেয়ে নাট্যচর্চা আর সংগীতেই তাঁর আকর্ষণ ছিল বেশি। পরবর্তী সময়ে লোরকা প্রচুর কবিতা লিখেছেন। স্বদেশভূমি স্পেনের বিচিত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ তাঁকে করে তোলে নিখুঁত শিল্পী। কবিতায়, পিয়ানোর সুরে, ক্রেয়নের ছবিতে, নাটকে-লোকগাথায় একাকার হয়ে যান শিল্পী লোরকা। সাহচর্য পান পৃথিবী বিখ্যাত অনেক শিল্পীর। অবসরে পাড়ায় পাড়ায় কবিতার আসর বসিয়ে কবিতা পাঠে ডুবে যান। এভাবেই লোরকা হয়ে ওঠেন স্পেনবাসীর প্রিয় বন্ধু, প্রাণের মানুষ। লোরকার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে, কাব্যগ্রন্থ: ‘ইম্প্রেশন অব ল্যান্ডস্কেপ’, ‘পোয়েম অব ডিপ সং’, ‘সনেটস অব ডার্ক লাভ’; নাটক: ‘দ্য বাটারফ্লাইস এভিল স্পেল’, ‘দ্য পাপেট প্লে অন ডন ক্রিসটাবেল’, ‘ব্লাড ওয়েডিং’; চিত্রনাট্য: ‘ট্রিপ টু দ্য মুন’; অপেরা: ‘লোরা দ্য অ্যাকট্রেস’ প্রভৃতি। স্পেনের ফ্যাসিস্ট ফ্র্যাংকোর ভাড়াটে গুণ্ডারা ১৯৩৬ সালের ১৯ আগস্ট ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে স্পেনের জনগণের প্রাণের প্রিয় এই কবিকে। তাঁর লাশ গুম করে ফেলা হয়। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় এক অনন্য শিল্পপ্রতিভা। মৃত্যুর আগে কবি বেশ কিছু সনেট লিখেছিলেন লোরকা। কিন্তু গৃহযুদ্ধের রক্তস্রোতে সেগুলো হারিয়ে যায়। তাঁর বিভিন্ন রচনা বাংলা সহ পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে।