‘বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে খাল-নালায় বর্জ্য পেলেই ব্যবস্থা’- এরকম কড়া নির্দেশনায় মনে হয় নড়েচড়ে বসেছেন নগরের বাসিন্দারা। তাঁরা এখনো পর্যন্ত এরকম কড়া প্রশাসক পাননি, যে কারণে ঢিলেঢালা জীবনপ্রণালীতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। যে যেখানে পারছেন, ময়লা ফেলছেন, গৃহস্থালী বর্জ্য ফেলছেন, পলিথিন ফেলে নালা-নর্দমা ভরাট করে ফেলছেন, কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, নেই আফসোস। এমতাবস্থায় এ নির্দেশনায় তাঁদের টনক নড়ারই কথা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে উক্ত নির্দেশনায় অভিযান চালানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। দৈনিক আজাদীতে গত ২ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘খাল-নালা পরিষ্কার করার কয়েকদিনের মধ্যে আবারো ভরাট হয়ে যায়। ভরাটের উপকরণের বেশিরভাগই গৃহস্থালী বর্জ্য, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও পলিথিন। তাই যারা এসব পণ্য খালে ফেলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের খাল-নালায় মালামাল পাওয়া যাবে এবং যদি প্রমাণ হয় ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ফেলা হয়েছে তাৎক্ষণিক ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। একইভাবে বাসা-বাড়ির সামনেও বর্জ্য পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে’।
সামান্য বৃষ্টিতে এখন নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়, তাতে নগরবাসীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্বল্প সময়ে সামান্য বৃষ্টিতে শহরের অনেক এলাকায় জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। এটাকে এড়ানো যেতো, যদি নগরে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা উন্নত থাকতো। কিন্তু শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রগুলো ভরাট হয়ে গেছে। শহরের অধিকাংশ খাল মরে গেছে, পুকুর, ডোবা ও জলাশয় দখল হয়ে গেছে। যে কটি এখনো টিকে আছে, সেগুলোয় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার। রাস্তায়, পুকুরে, নদীতে যত্রতত্র পলিথিন ফেলে পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ করা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় হলো পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা। সেই সঙ্গে সব খাল, পুকুর, ডোবা, জলাশয়গুলোকে দখলমুক্ত করতে হবে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত তদারকির ঘাটতিও লক্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের খাল ও ড্রেন পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও তা করা হয় কিনা সন্দেহ। ফলে নালা দখল, নালা ও খালের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে নালা-খাল ভরাট হয়ে থাকে। তাই ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য অপসারণে ব্যর্থতার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই এড়াতে পারে না। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত ও কার্যকর কোনো পদ্ধতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, ড্রেনগুলোর সংস্কারকাজে অযথা সময়ক্ষেপণ এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্ন না করা, নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
এতদসত্ত্বেও আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরবাসীকে তাঁদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বা শুধু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, আমরা নাগরিক হিসেবে আমাদের যে দায় রয়েছে, সেটা কি আমরা পালনে সচেষ্ট আছি? যে কড়া নির্দেশনা আমরা শুনলাম, তার বাস্তবায়ন করা দরকার। এ বিষয়ে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যার বাসা-বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গৃহস্থালী বর্জ্য, মালামাল বা পলিথিন পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির বিধান করার ঘোষণায় কিছুটা হলেও পরিচ্ছন্ন থাকবে নগরী এবং জলাবদ্ধতার শংকা থেকে নগরবাসী মুক্তি পেতে পারে বলে আমাদের ধারণা। আমাদের বোঝা দরকার যে, আমাদের হাতেই আমাদের ভোগান্তি এবং আমাদের হাতেই আমাদের মুক্তি। খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। তারপরও যদি কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।