দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা দিবস উদযাপিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড বিশেষ এই দিবসটি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চা দিবসের অনুষ্ঠানমালা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর থেকে দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। এবারও বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠান আয়োজনের চিন্তাভাবনা করা হলেও শেষতক করোনার দ্বিতীয় ঢেউর কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করতে হচ্ছে। দেশের চা শিল্পের বিকাশ, চা শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়ন এবং রপ্তানি বাড়ানোসহ বিভিন্নমুখী পদক্ষেপের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিতে এবারের চা দিবসে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানে মোট ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে চাষযোগ্য ভূমির পরিমাণ ৬৪ হাজার ৮৮৬ দশমিক ২৫ হেক্টর। তবে চা চাষ হয় মোট ৫৯ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে। চা বাগানের জমি পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়া চায়ের ফলন কম হওয়ার জন্য প্রধানত দায়ী বলে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা বাগানের জমি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে উৎপাদন অনায়াসে দ্বিগুণে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে মাত্র ৫২ ভাগ জমি চা চাষের যোগ্য। বাকি ৪৮ ভাগ জমি চা চাষের বাইরে রয়েছে। চা একসময় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য থাকলেও দিনে দিনে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বর্তমানে এসব বাগানে যে পরিমাণ চা উৎপাদিত হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদাও পুরোপুরি মিটে না। বিদেশ থেকে প্রতিবছরই চা পাতা আমদানি করতে হচ্ছে। ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চা পাতা চোরাইপথেও দেশে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত বছর (২০২০ সালে) দেশের বাগানগুলোতে ৮ কোটি ৬৪ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২০ লাখ কেজি চা। ২০১৯ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে নানাভাবে কাজ করছে সরকার। এক সময় শুধু সিলেট-চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় চা চাষ হলেও এখন সমতলেও আবাদ সমপ্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ সমতলের অন্যান্য অঞ্চল মিলিয়ে ১২ শতাংশ চা আবাদ হয়। ময়মনসিংহ অঞ্চলেও চায়ের আবাদ শুরু হচ্ছে। পাহাড় এবং সমতলে চায়ের আবাদ আরো বৃদ্ধিসহ সার্বিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় চা দিবস উদযাপন বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
সূত্র জানায়, ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্মৃতির কারণে স্বাধীনতার পরেও দেশ পুনর্গঠনের সময় চা শিল্প নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ ছিল অসীম। তিনি চা’র উৎপাদন বৃদ্ধি, চা শিল্পের বিকাশ, চা শ্রমিকদের শিক্ষা, রেশন, সুপেয় পানি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অনেক কিছু করেছেন, করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় রাখতে ৪ জুন জাতীয় চা দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আজ জাতীয় চা দিবস পালিত হচ্ছে।