হালদায় মিলেছে মোট সাড়ে আট হাজার কেজি ডিম

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ জুন, ২০২১ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

প্রত্যাশা পূরণ না করলেও এবার হালদা নদীতে দুই দফায় সর্বমোট সাড়ে আট হাজার কেজি ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এরমধ্যে প্রথম দফার সাড়ে ছয় হাজার কেজি এবং এক সপ্তাহের মাথায় ২য় দফায় গত বুধবার দুই হাজার কেজি ডিম পাওয়া গেছে। প্রথম দফার বহু ডিম নদীর লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়ে গেলেও দ্বিতীয় দফায় পাওয়া দুই হাজার কেজি ডিমের রেণু ফোটানো সুষ্ঠুভাবে শুরু হয়েছে। হালদা নদী সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতবছর রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার পর এবারও বেশ আশাবাদী ছিল প্রশাসন এবং ডিম সংগ্রহকারীরা। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি। গত ২৬ মে মাত্র সাড়ে ছয় হাজার কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছিল। এই ডিমও রেণু ফোটাতে গিয়ে লবণাক্ত পানির কবলে পড়ে। ফলে বিপুল পরিমাণ ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এতে ডিম সংগ্রহ এবং রেণু ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হন।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত বুধবার আবারো ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবার ডিম সংগ্রহকারীরা বেশ আশাবাদী হয়ে নদীতে নামেন। কিন্তু উজানে একটি সত্তারখালের দিকে কিছু এলাকায় ডিম ছাড়লেও পুরো নদীতে ডিম ছাড়া হয়নি। এতে করে প্রায় সাড়ে তিনশ’ নৌকা ডিম সংগ্রহে নামলেও চল্লিশটির মতো নৌকা ডিম পায়। বাকিরা শূন্য হাতে ফিরে। এতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়া নিয়ে সকলের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও তা থেমে যেতে বেশি সময় লাগেনি।
গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্চ ল্যাবরেটরি টিম প্রতিটি হ্যাচারি এবং মাটির কুয়াগুলোতে রেণু ফোটানোর জন্য দেয়া ডিমের হিসেব করে রিপোর্ট প্রদান করেন। ল্যাবরেটরি গবেষক টিম গত বুধবার দুই হাজার কেজি ডিম পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন।
বুধবার সংগৃহিত ডিমগুলো মোবারকখীল হ্যাচারি, আইডিএফ-পিকেএসএফ হ্যাচারি, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারি এবং মাটির কুয়াতে ডিম দেয়া হয়েছে। এসব ডিম থেকে রেণু ফোটানোর প্রক্রিয়া চলছে। হ্যাচারি এবং কুয়ায় হালদার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে হালদার পানির লবণাক্ততা একেবারে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে বলেও হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পানিতে কোনো লবণাক্ততা নেই। তাই এবার রেণু ফোটানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
এবার সর্বমোট ৮৫০০ কেজি ডিম পাওয়া গেলেও গত বছর হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ হয়েছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। হালদা থেকে এযাবতকালে ২০০৬ সালেই সর্বোচ্চ পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ওই বছর ৩২ হাজার ৭২৪ কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে মাছ পুরোমাত্রায় ডিম ছাড়েনি। মাত্র ৭৩৫ কেজি নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ২০১২ সালে এক হাজার ৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া যায় হালদায়। তার আগের বছর ২ মে নমুনা ডিম মেলে ৭৩৫ কেজি। ওই বছর তিনবার নমুনা ডিম দিলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ১৩ লাখ শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল
পরবর্তী নিবন্ধপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিবসহ ৮ জনকে দুদকে তলব