প্রস্তাবিত বাজেটে ‘স্বজনতোষণ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বনানীর নিজ বাসায় তিনি বলেন, ‘এই বাজেট স্বজনতোষণের বাজেট। এই সরকার স্বজনতোষণের অর্থনীতি চালু করেছে। এর মাধ্যমে যাদের ব্যাংক ব্যালেন্স আরও বড় হতে থাকবে তাদের জন্য এই বাজেট হয়েছে- এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।’ বাজেটে সাধারণের বরাদ্দ কোথায় প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন ‘১০-২০ হাজার কোটি টাকার কথা যখন তারা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, পদ্মা ব্রিজে যায় আড়াই হাজার কোটি, ওই মেগা প্রজেক্টে যায়, এই মুহূর্তে এসব প্রয়োজন নাই। বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে তাদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করে তাদেরকে সাথে নিয়ে অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে এক শতাংশ মানুষের সুযোগ সুবিধার জন্য কোনো অর্থনীতি হতে পারে না।’ খবর বিডিনিউজের।
মহামারীতে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে দাবি করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে যদি যোগ করা হয় তাহলে মোট ৫-৬ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে গেছে। এদেরকে বরাদ্দ না দিয়ে তারা মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ দিচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সবচেয়ে কম প্রণোদনা হচ্ছে বাংলাদেশে, স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশে, শিক্ষা খাতে কম।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে জিডিপি’র ৫ শতাংশের ওপরে বরাদ্দ রাখা উচিত ছিল বলেও মনে করেন চার দলীয় জোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির শীর্ষ ফোরামের এই সদস্য।
‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি সেই আগের মতোই বরাদ্ধ রেখেছে বাজেটে। সরকার এটাকে একটা গতানুগতিক, এত বছর যেভাবে বাজেট দিয়ে আসছে, সেইভাবে এবারও দিয়েছে। মহামারীতে যারা কর্মচ্যুত হয়েছে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্ত ও ছোট শিল্পগুলোকে পুনরুদ্ধারের জন্য প্রণোদনা হিসবে বিএনপির পক্ষ থেকে জিডিপির ন্যূনতম ৭-৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছিল বলেও জানান তিনি। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি তাদের জন্য জিডিপির সেই পুরনো ১-২ শতাংশ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা আমার মনে হয় এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম। তিনি বলেন, যারা হতদরিদ্র, দরিদ্র, দিন আনে দিন খায়, অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করে, যারা রিকশাওয়ালা, ঠেলা গাড়িওয়ালা, যারা খাবার বিক্রি করে, চা দোকানদার তারা তো বসে গেছে। তাদের জন্য প্রণোদনা বা ক্যাশ ট্রান্সফার হয়নি।
কালো টাকার প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই করোনাকালীন সময়ে যেখানে মানুষ দুঃসহ জীবনযাপন করছে তখন ২ হাজারের উপরে লোকের অপ্রদর্শিত আয় কালো টাকা। দেখলাম কয় হাজার লোক কোটিপতি হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রপ্তানি, আমদানিসহ অর্থনীতির সব সূচক নিম্নগামী উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকার এরকম বাজেট দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি অবিচার করেছে।’