আমদানি নিষিদ্ধ, তবুও বাজারে

পোস্তদানার উৎস নিয়ে প্রশ্ন ।। 'দারাজ', 'চালডাল ডট কম' সহ বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটেও পাওয়া যাচ্ছে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বিয়ে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের রান্নার স্বাদ বাড়াতে পপি সীডস বা পোস্তদানার ব্যবহার অনেক পুরনো। এটি মূলত মসলাজাতীয় পণ্য হলেও নিষিদ্ধ আফিমের উপজাত হিসেবে এর পরিচিতি রয়েছে। সরকার তাই আমদানি নীতিতে পোস্তদানাকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। আমদানি নীতিতে নিষিদ্ধ হলেও ভোগ্যপণ্যের বাজারে পোস্তদানা অনেকটাই সহজলভ্য। ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন মসলার আড়তে দেখা মিলে পোস্তদানার। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মনে তাই পণ্যটির উৎস নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। অপরদিকে পণ্য সরবরাহের ই-কমার্স সাইট ‘দারাজ’ ও ‘চালডাল ডট কম’সহ বিভিন্ন অনলাইন সাইট থেকেও পোস্তদানা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ‘দারাজ’ তাদের সাইটে ১০০ গ্রাম পোস্তদানার দাম ১৫৯ টাকা এবং ‘চালডাল ডট কম’ ১০০ গ্রামের দাম ১২৬ টাকা উল্লেখ করেছে। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমদানি নিষিদ্ধ হলেও বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় কিংবা প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে চোরাইপথে বেশি আসে পোস্তদানা। বন্দর দিয়ে সাধারণত সরিষা কিংবা শস্যবীজের ঘোষণায় অনেক আমদানিকারক পণ্যটি নিয়ে আসে। পোস্তদানা বিভিন্ন ধরনের শস্যবীজের সাথে সাদৃশ্য থাকায় অনেকে সন্দেহে পড়ে যান। এই সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে পণ্যটি বাজারজাত করে আসছে।
জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের জুনে ত্রিবার্ষিক আমদানি নীতি আদেশে ২১ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ‘আমদানি নীতি ২০১৮-২১’ অনুমোদন দেয় সরকার। সেখানে পপি সীডস বা পোস্তদানাও রয়েছে। সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি নীতি ২০১৮-২১ তিন বছর মেয়াদী এ আমদানি নীতি উপস্থাপন করা হলে তা পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সরিষা বীজের ঘোষণায় ৪২ টন পোস্তদানা নিয়ে আসে ঢাকার আমদানিকারক আজমাইন ট্রেড সেন্টার। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালানটি আটকের পর সারাদেশে এই নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অবশ্য একইভাবে গত বছরের ১০ আগস্ট মংলা বন্দর দিয়ে ঢাকার দুই আমদানিকারক ৬৮ টন পোস্তদানা নিয়ে আসেন। মংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দুই আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মংলা থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে। একইভাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষও মিথ্যা ঘোষণা এবং আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির দায়ে ফৌজদারি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে চালানটি খালাসে দায়িত্ব নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। চালানটি আমদানির মাধ্যমে কোনো অর্থপাচার হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে কাস্টমসের এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট।
আমদানি নিষিদ্ধ পোস্তদানার অবাধ বাজারজাতকরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক এবি ট্রেডার্সের অমর কান্তি দাশ বলেন, পোস্তদানা তিন দশক ধরেই নিষিদ্ধ। আমরা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য রাখি না। তবে যেসব পাওয়া যাচ্ছে সেসব হয়তো মিথ্যা ঘোষণা কিংবা চোরাইপথে আসছে। অপর আমদানিকারক এম ইউ ব্রাদার্সের উৎপল চৌধুরী মানিক বলেন, পোস্তদানা আমদানি নিষিদ্ধ। তাই পণ্যটি রাখার তো প্রশ্নই আসে না।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক মসলা ব্যবসায়ী বলেন, চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি পোস্তদানা আমদানি হয়। এছাড়া কিছু পরিমাণ ভারত থেকে আসে। খাতুনগঞ্জের বাজারে একপ্রকার উন্মুক্তভাবে পোস্তদানা বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়।
উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ জয়পুরহাটে সাত বিঘা জমিতে চাষ করা চার লক্ষাধিক পপি গাছ (পোস্তদানার গাছ) ধ্বংস করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসব গাছে উৎপন্ন হয় ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ পপি ফল। পপি গাছের বীজ থেকে কাঁচা অবস্থায় রস সংগ্রহ করে আফিম তৈরি হয়। আর এই বীজ পরিপক্ব হলে তার নাম হয় পোস্তদানা। এ হিসেবে পোস্তদানাকে আফিম বলা হয়। নেশাদ্রব্য হিসেবেও পোস্তদানার ব্যবহার আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩৮৬৫ কোটি টাকার দুই প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ আরো এক ধাপ এগোলো