চুক্তির মাধ্যমে জুয়ার বোর্ড চলতো রেফারী সমিতিতে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ২ জুন, ২০২১ at ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে স্টেডিয়াম কম্পাউন্ডে অবস্থিত চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারী সমিতির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে রেফারী সমিতির কার্যালয়ে জুয়ার আসর বসতো বলে অভিযোগ করে আসছিল ক্রীড়াঙ্গনের সংশ্লিষ্ট অনেকেই। বছরখানেক আগে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা এক চিঠির মাধ্যমে রেফারী সমিতির কার্যালয়ে সব ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। ধারনা করা হয়েছিল সে নির্দেশের পর হয়তো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই জুয়ার আসর। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে চলতো সেটা জানতে পারেনি কেউই। শেষ পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল জুয়ার সরঞ্জাম এবং নগদ টাকা সহ জুয়াড়িদের গ্রেফতার করেছে ।
এদিকে রেফারী সমিতিতে চুক্তির মাধ্যমে জুয়ার আসর চলতো তেমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশন কার্যালয়ের দ্বিতীয় কক্ষটি এবং উপরের বর্ধিত অংশ এসোসিয়েশনের সদস্যদের উন্নতিকল্পে কার্ড খেলা সংক্রান্ত বিষয়াদি পরিচালনার জন্য মাসিক ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে ব্যবহারের চুক্তি হয়। আর সে চুক্তিতে প্রথম পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেন আবদুল হান্নান মিরন, লালখান বাজার চট্টগ্রাম। পিতা : মৃত আবদুল মালেক। আবদুল হান্নান মিরন রেফারীজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। আর দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেন সীমান্ত সেন, পিতা : মৃত গোপাল চন্দ্র সেন। এস এস খালেদ রোড চট্টগ্রাম। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা চলার কথা ছিল ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। চুক্তি মোতাবেক দৈনিক ৪ হাজার টাকা করে মাসে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারিত ছিল। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই ভাড়া নির্ধারিত ছিল সাড়ে চার হাজার টাকা। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত দৈনিক ভাড়া নির্ধারিত ছিল পাঁচ হাজার টাকা। অগ্রিম ভাড়া বাবদ সীমান্ত সেন চুক্তি মোতাবেক তিন লক্ষ টাকা প্রদান করে। চুক্তি মোতাবেক গেইম, হাইড্রোজেন, রামি, কল ব্রিজ ইত্যাদি খেলা পরিচালিত হতো। কিন্তু দেড় বছর চলার পর জুয়ার আসর বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সীমান্ত সেন এর বড় ভাই কৃষ্ণ কমল সেন। তবে এরই মধ্যে গোপনে জুয়ার আসর চালিয়ে যেতো রেফারী সমিতি। যাতে সীমান্ত সেন পক্ষকে টাকা দিতে না হয় তেমনটি অভিযোগ করেছেন
কৃষ্ণ কমল সেন। তিনি জানান রেফারী এসোসিয়েশনের যে ক্ষটিতে জুয়ার আসর বসতো সেটির ডেকোরেশন সহ নানা কাজ করতে গিয়ে তাদের আরো সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়েছে।
এতদিন সবাই জানতো স্টেডিয়াম এলাকায় কোন জুয়া চলতো না। কিন্তু গতকাল পুলিশি অভিযানের পর আবার দৃশ্যপটে চলে এলো রেফারী এসোসিয়েশন। গতকাল
কৃষ্ণ কমল সেন জানান তারা তাদের পাওনা টাকার জন্য মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এদিকে স্টেডিয়াম এলাকায় জুয়ার আসরে অভিযান এটাই প্রথম বলে জানালেন সিজেকেএস সহ সভাপতি হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন আমি ১৯৭২ সাল থেকে এই স্টেডিয়ামের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু আমরা কোনদিন শুনি নাই স্টেডিয়াম এলাকায় জুয়ার আসর বসতো কিংবা জুয়ার আসর থেকে পুলিশ জুয়াড়ি গ্রেফতার করেছে। এবার প্রথম এমন কথা শুনলাম। তিনি বলেন যেহেতু পুলিশ গ্রেফতার করেছে এখন তারা আইন মোতাবেক তাদের ব্যবস্থা করবে। তবে যেহেতু ঘটনাটা ঘটেছে স্টেডিয়াম কম্পাউন্ডে সেহেতু এখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের স্টেডিয়াম এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা উচিত। সে সাথে রেফারী সমিতির কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। হাফিজুর রহমানের সাথে একই সুরে কথা বললেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহি সদস্য দিদারুল আলম। তিনি বলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন সব সময় জুয়ার বিরোধী। তিনি চিঠি দিয়ে রেফারী সমিতির এই জুয়া এবং সকল অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। জুয়া বিরোধী অবস্থানের জন্য তাকে নানা জনের রোষানলেও পড়তে হয়েছে। অথচ তাকে অন্ধকারে রেখে যারা স্টেডিয়াম এলাকায় এমন অপকর্ম করেছে তাদের স্টেডিয়াম এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষনার দাবি করছি। একই সাথে নানা অপকর্মের হোতা রেফারী সমিতির কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। গতকাল রেফারী সমিতির কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের পর তা নিয়ে ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনা স্টেডিয়াম এলাকায় কখনো ঘটেনি। রেফারীরা হচ্ছে বিচারক। বিচারক হয়ে যারা এমন ঘৃন্য কর্মকান্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণ কেন্দ্রটিকে কলুষিত করেছে তারা যেন আর স্টেডিয়াম এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে। সিজেকেএস সাধারন সম্পাদক এবং কমিটির কাছে তেমন দাবি করছেন অনেকেই। ক্রীড়াঙ্গনকে পবিত্র অঙ্গন বলা হয়ে থাকে। যারা এমন পবিত্র অঙ্গনকে অপবিত্র করেছে তাদের বিচার দাবি করেছেন ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, রেফারী সমিতির অপকর্মের যেন শেষ নেই। অথচ জেলা ক্রীড়া সংস্থা বারবার রেফারী সমিতিকে এসব অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু গোপনে নানা অপকর্ম চালিয়ে গেছে এই রেফারী সমিতি। আজ অপবাদটা এসে পড়লো সবার ঘাড়ে। তিনি বলেন যেহেতু সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের ঘোর বিরোধী কাজেই তিনি এবার কঠোর হবেন। কারন পুলিশি অভিযান চলেছে স্টেডিয়াম এলাকায়। কাজেই এখন আর কোন ধরনের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন সিজেকেএস এর নির্বাহি কমিটির সভায় এ বিষয় নিয়ে কথা বলব যাতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। উল্লেখ্য রেফারি সমিতির কার্যালয়টি চট্টগ্রাম ফুটবল ট্রেনিং একাডেমির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ের পিড়িতে বসছেন পাক দলপতি বাবর আজম
পরবর্তী নিবন্ধনতুন ধরনের বার্ড ফ্লুয়ে চীনে প্রথম আক্রান্ত