একটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর পুরো টাকাই পরামর্শক খাতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প থেকে ‘পরামর্শক’ শব্দ বাদ দিয়ে নাম পরিবর্তনসহ প্রকল্পের মোট ব্যয় কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ। প্রকল্পের নাম ‘মদুনাঘাট ভুলতা ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প প্রস্তুতকরণে সহযোগিতার জন্য পরামর্শক সেবা’। বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভায় প্রকল্পের ‘পরামর্শক সেবা’ শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এসপিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে। খবর বাংলানিউজের। প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন সুপারিশ তুলে ধরে জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি জরিপ অথবা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প হিসাবে উপস্থাপন না করে কেন কারিগরি সহায়তা প্রকল্প হিসাবে পেশ করা হয়েছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা পুনর্গঠিত টিএপিপিতে (কারিগরি সহায়তা প্রকল্প) সংযুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পটির নামের সঙ্গে ‘পরামর্শক সেবা’ শব্দসমূহ বাদ দিতে হবে এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নামকরণ করতে হবে। প্রকল্পটির আওতায় প্রণীত প্রতিবেদনসমূহে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, কমিশন, বিভাগের জারিকৃত সর্বশেষ নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। মূল প্রকল্প শুরুর মেয়াদ এবং প্রস্তাবিত টিএপিপির কার্যপরিধি ও ব্যাপ্তি বিবেচনা করে প্রকল্পের মেয়াদ যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
টিএপিপিতে উল্লিখিত অঙ্গের বিভিন্ন আইটেমে ব্যয় বিভাজন এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে আইটেমভিত্তিক ব্যয় নির্ধারণে দ্বৈততা পরিহার করতে হবে। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিজিসিবির অন্যান্য প্রকল্পে গৃহীত পরামর্শ সেবার সঙ্গে আলোচ্য প্রকল্পে প্রস্তাবিত পরামর্শক সেবার একক দরের তুলনামূলক বিবরণীও টিএপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সুপারিশ তুলে ধরে জানায়, টিএপিপিতে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে পরিবেশগত ছাড়পত্রের নবায়ন ফি বাবদ ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা (বার্ষিক ১.৪৪ লক্ষ টাকা হারে) অপরিবর্তিত থাকবে। একই সঙ্গে বিবিধ খাতের ব্যয় ২ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। প্রস্তাবে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতটি সম্পূর্ণই বাদ দিয়ে মদুনাঘাট-ভুলতা ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মূল প্রকল্পের ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রকল্পটিতে পরামর্শক নিয়োগসহ প্রতিবেদন ও ডকুমেন্টশন পিজিসিবির তত্ত্বাবধা়নে করতে হবে। মদুনাঘাট-ভুলতা ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মূল প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৯ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বিধায় মূল প্রকল্প চলাকালীন বৈদেশিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলে পিজিসিবির কর্মকর্তাগণ সক্রিয়ভাবে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান অভিমত ব্যক্ত করেন।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ তারিফুল বারী বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে মূলত ‘মদুনাঘাট-ভুলতা ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে বিধায় এটি জরিপ/সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের আকারে উপস্থাপন করা সমীচীন হবে। পরামর্শক বিষয়টি বাদ দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ই পরামর্শক খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে আমরা সভা করেছি। সভায় প্রকল্পের ব্যয় কমানোসহ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে এমন অভিজ্ঞতা পিজিসিবির নেই। আমাদের অভিজ্ঞতা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের। প্রকল্পের কিছু খাতের ব্যয়ও কমাতে বলা হয়েছে।
পিজিসিবি জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহেশখালী অঞ্চলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৮২৮ মেগাওয়াট এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েট করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের লোড সেন্টারে সরবরাহ করতে হলে মহেশখালী থেকে মদুনাঘাট এবং মদুনাঘাট থেকে ভুলতা পর্যন্ত উচ্চক্ষমতার ট্রান্সমিশন লাইন প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী পিজিসিবি মহেশখালী হতে মদুনাঘাট এবং মদুনাঘাট হতে ভুলতা পর্যন্ত ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে মদুনাঘাট হতে ভুলতা পর্যন্ত ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইনটি নির্মাণের লক্ষ্যে বৈদেশিক ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনের নেতৃত্বে গঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)। ইতোমধ্যে টিএপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এআইআইবি ৩ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক অনুদান সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে।
পিজিসিবির প্রকৌশলী বেগম সাহেরা আক্তার বলেন, আলোচ্য কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি ৩৭ কোটি ৫৫ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় সিস্টেম স্টাডি, ব্যয় প্রাক্কলন, রুট বরাবর প্রধান নদীগুলির জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা সম্পাদন, পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন, অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিশ্লেষণ, ইঞ্জিনিয়ারিং লে-আউট, ডিজাইন, দরপত্র প্রস্তুতকরণ ও ক্যাপাসিটি উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি সমাপ্তির পর সমীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ‘মদুনাঘাট-ভুলতা ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এআইআইবি এবং পিজিসিবির মধ্যে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শক নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।