আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে গত বছরের মতো এবারও আমের ভালো ফলন হয়েছে। দেশে আমের মোট চাহিদার বেশিরভাগই আসে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, দিনাজপুর ও রংপুর। এর বাইরে চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে উৎপাদিত আমেরও বিশাল বাজার রয়েছে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, আমের মোট উৎপাদনের হিসাবটি হয় মৌসুম শেষে। তবে গত বছর পার্বত্য জেলা বাদে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে ৪০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি উৎপাদন হয়েছে। এ বছর সেই সংখ্যা কমানোর সুযোগ নেই, তবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আম উৎপাদনে আবহাওয়া একটি মুখ্য বিষয়। এ বছর আবহাওয়া ভালোই ছিল। এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত আম নগরীর প্রধান ফলের আড়ত ফলমন্ডিতে আসা শুরু হয়েছে। তাই ফলমন্ডির বিক্রেতাদের এখন ব্যস্ততা বেড়েছে। আড়তের শ্রমিকরা রাত দিন ট্রাক থেকে আমের ক্যারেট (ঝুড়ি) ওঠানামায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের আম চট্টগ্রামের বাজারে এসেছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমের সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন সেখানকার চাষিরা। কারণ ভারতীয় সীমান্তবর্তী অনেক জেলায় এখন কড়া লকডাউন।
ফলমন্ডিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তে এখন ল্যাংড়া, আম্রপালি এবং গুটি জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি ক্যারেটে ২৫ কেজি মতো আম আসছে। বর্তমানে পাইকারিতে মানভেদে ল্যাংরা ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, আম্রপালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং গুটি জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
ফলমন্ডির সালেহ ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বর্তমানে যেসব আম বাজারে আসছে বেশিরভাগই কাঁচা এবং আধা পাকা। পাকা আমের পরিমাণ কম। ফলমণ্ডিতে এখন গড়ে ৮ থেকে ১০ ট্রাক আম আসছে। আগামী জুনে আমের সরবরাহ আরো বাড়বে। কারণ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক বাগানে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া মাত্র শুরু হয়েছে। সেগুলো চট্টগ্রামের বাজারে আসতে আরো সপ্তাহ-দশ দিন সময় লাগতে পারে। তবে এ পর্যন্ত আমের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
ফলমণ্ডি ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইউনুছ দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে ফলমণ্ডিতে আমের সরবরাহ বেড়েছে। একেক সময় একই অঞ্চলে আম পাকে। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে উৎপাদিত আম ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। এখন উত্তরাঞ্চল থেকে আম আসা শুরু হয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম আসতে একটু সময় লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৬ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, আম বিশেষজ্ঞ, চাষি ও ব্যবসায়ীদের এক সভায় ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। গোপালভোগ জাতের আম ২০ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ ২৫ মে এবং হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ২৮ মে এবং ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ পাড়া যাবে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার ৩ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, আমের মোট উৎপাদনের হিসেবটি হয় মৌসুমের শেষে অক্টোবরের দিকে। উপজেলাগুলো থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তারপর উৎপাদনের মোট তালিকা করা হয়। এ বছর যেহেতু আবহাওয়া ভালো ছিল, তাই আশা করা যায়, আমের উৎপাদন এবার খারাপ হবে না।












