বাংলা সাহিত্যের ভুবনে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক অবিস্মরণীয় নাম। সমাজ মনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি আর মনোবিশ্লেষণের নিপুণ দক্ষতায় কথাশিল্পী মানিক তাঁর উপন্যাস আর ছোটগল্পে এক কুশলী চরিত্র নির্মাতা।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। জন্ম ১৯০৮ সালের ২৯শে মে সাঁওতাল পরগণার দুমকায়। মানিক তাঁর ডাক নাম এবং সাহিত্য জগতে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে। কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের ছাত্র থাকাকালীন মাসিক বিচিত্রা’য় তাঁর লেখা প্রথম ছোটগল্প ‘অতসী মামী’ প্রকাশিত হলে সাহিত্য মহলে সারা পড়ে যায়। এরপর সাহিত্যের ভুবনেই তার নিরবচ্ছিন্ন পথচলা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি উপন্যাস, বেশ কিছু ছোটগল্প এবং কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সকল রচনাতেই মানিক নিজস্ব একটি ধারা বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন। তিনি সমাজ- ভাবুক লেখক। চরিত্র সৃষ্টিতে সূক্ষ্মদর্শী। চেনার গভীরে লুকিয়ে থাকা অচেনা অনুভূতি অদ্ভুতভাবে তাঁর রচনায় ধরা দেয়। গতানুগতিক ধারার ভাবাবেগের বাইরে মার্কসীয় দর্শন আর ফ্রয়েডীয় মনোবিশ্লেষণ রূপায়িত হয় তাঁর সৃষ্টিতে শিল্পসম্মতরূপে ও সার্থকভাবে।
উপন্যাস: ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘চতুষ্কোণ’, ‘ইতি কথার পরের কথা’, ‘আরোগ্য’, ‘হলুদ নদী সবুজ বন’; গল্পগ্রন্থ : ‘অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সরীসৃপ’, ‘আজকাল পরশুর গল্প’, ‘মাটির মাশুল’; প্রবন্ধগ্রন্থ : ‘লেখকের কথা’ ইত্যাদি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য রচনা।
সমকালীন অন্যান্য বাঙালি লেখকদের চেয়ে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। ১৯৫৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর সমাজ সচেতন কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হন।