১৮ ঘণ্টার নিষ্ফল অপেক্ষা

হালদায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ, দু’দফায় সামান্য নমুনা সংগ্রহ

রাউজান ও হাটহাজারী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৭ মে, ২০২১ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। গত ১৮ ঘণ্টা ধরে নৌকা-জাল নিয়ে সেখানে মাছের ডিম সংগ্রহের আশায় নিষ্ফল ছোটাছুটি করেছে মৎস্যজীবীরা। এই সময়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দফায়-দফায় জাল ফেলেও প্রত্যাশিত ডিম সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন তারা। অবশ্য তৎপর মৎস্যজীবীরা এক থেকে দুইশ গ্রাম নমুনা ডিম জালে আটকাতে পেরেছেন। মৎস্যজীবীরা বলেছেন, ধারণা করা হয়েছিল মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম দেবে। কিন্তু পাওয়া গেল নমুনা ডিম। ছোটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে বিকালে রাউজান অংশের আজিমের ঘাটে নৌকা নোঙ্গর করে বসেছিলেন হাটহাজারীর গড়দুয়ারা গ্রামের মৎস্যজীবী জসিম উদ্দিন ও আবুল কালাম। তারা বলেন, গত ২৫ মে রাত পৌনে ১২টা থেকে গতকাল সারা দিন নদীর গড়দুয়ারা, আজিমের ঘাট, আমতুয়া, কাগতিয়া, সিপাহীঘাট এলাকায় ডিমের আশায় ছোটাছুটি করেছেন তারা। তাদের মতই হতাশ উরকিরচরের মৎস্যজীবী মোহাম্মদ রফিক, তপন দাসসহ অর্ধশত মৎস্যজীবী। সকলেই জানিয়েছেন, রাতে অপেক্ষায় থাকবেন ডিমের আশায়। এদিকে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা অনেকেই বলছেন, নদীর পানিতে লবণাক্ততা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের বর্ধিত পানি নদীর পাড় ডিঙ্গিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এই পানি অনেকের কুয়ায় (ডিম ফোটার জন্য তৈরি রাখা মাটির কুয়া) প্রবেশ করেছে। ফলে সংগ্রহ করা গেলেও এসব ডিম কুয়ার লবণাক্ত পানিতে রেখে পোনায় রূপান্তর করতে হলে তুলনামূলকভাবে বেশিরভাগ ডিম নষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে নদীতে মা মাছ ডিম দেয়ার খবর পেয়ে হালদায় ছুটে যান রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি স্পিডবোর্ড নিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। কথা বলেন মৎস্যজীবীদের সাথে। সাংসদ বলেন, হালদা এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। ফলে নদীর মা মাছ রক্ষায় সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
এ সময় রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, ইউএনও জোনায়েদ কবির সোহাগ, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় ও পূর্ণিমা শেষ না হলে মা মাছ ডিম ছাড়ে না। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও পূর্ণিমার জো থাকায় নদীতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পরেছে। আর লবণাক্ত পানি ডিম ছাড়ার পক্ষে অনুকূলে নয়। পানিতে লবণাক্ততা কমে গেলে মা মাছ ডিম ছাড়বে। এই মাসের ২৪ থেকে ২৮ তারিখে ডিম ছাড়ার একটি সময় রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হালদা নদীতে ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুই দফা নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। মৎস্যজীবীরা জানান, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে নদীর বেশ কিছু স্থানে নমুনা ডিম পাওয়া যায়।
এছাড়া গতকাল বুধবার ১২টার দিকে নদীর অংকুরীঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, সিপাহীঘাট, কাকতিয়ার টেক, নাপিতের ঘাট, আজিমার ঘাট, মাছুয়াঘোনা স্লুইস গেইট, কুমারখালি, আমতুয়া, ব্রিকফিল্ড, পোড়াকপালি, হোনাইরমুখ, খাড়িরমুখ, বড়িয়াঘোনা রামদাস মুন্সিরহাট স্থানে নমুনা ডিম পাওয়া যায়। সেখান থেকে সংগৃহীত নমুনা ডিমের রেনু ফোটানোর জন্য কয়েকজন মৎস্যজীবী হ্যাচারিতে নিয়ে যায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুন হুদা রনি বলেন, ডিম আহরণকারীরা তিন শতাধিক নৌকা ও সরঞ্জাম নিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষা করছে। তবে দুই দফায় যে পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে তা সামান্য।
হাটহাজারী ইউএনও মো. রুহুল আমিন বলেন, এই মুহূর্তে হয়তো মা মাছ ডিম ছাড়বে না। তবে ডিম ছাড়লে রেনু ফোটানোর যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহসিন কলেজ ছাত্র খুন
পরবর্তী নিবন্ধহালদায় সহনীয় মাত্রার ৩৬ গুণ বেশি লবণাক্ততা