ডিম সংগ্রহের আশায় হালদায় মৎস্যজীবীদের ১৮ ঘণ্টার নিষ্ফল ছোটাছুটি

রাউজান প্রতিনিধি | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ৯:৫৬ অপরাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর মাছের ডিম সংগ্রহের আশায় থাকা মৎস্যজীবীরা গত ১৮ ঘণ্টা ধরে নিষ্ফল ছোটাছুটি করেছে নদীতে নৌকা ও জাল নিয়ে।
এই সময়ে তারা নদীর বিভিন্ন পয়ন্টে দফায় দফায় জাল ফেলে আশানুরুপ ডিম সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়।
ডিম সংগ্রহ করতে তৎপর মৎস্যজীবীরা মাত্র এক থেকে দুইশ’ গ্রাম করে ডিম জালে আটকাতে পেরেছে। এই পরিমাণ ডিম তাদের কোনো কাজে আসছে না।
মৎস্যজীবীরা বলেছেন, ধারণা করা হয়েছিল মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম দেবে। পাওয়া গেল নমুনা ডিম।
নৌকা ও জাল নিয়ে ছোটাছুটিতে ক্লান্ত হয়ে বিকালে রাউজান অংশের আজিমের ঘাটে নৌকা নোঙর করে বসেছিলেন হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা গ্রামের মৎস্যজীবী জসিম উদ্দিন ও আবুল কালাম।
তারা বলেছেন, গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত পৌনে বারোটা থেকে আজ বুধবার (২৬ মে) সারাদিন নদীর গড়দুয়ারা, আজিমের ঘাট, আমতুয়া, কাগতিয়া, সিপাহীঘাট এলাকায় ডিমের আশায় নৌকা ও জাল নিয়ে ছোটাছুটি করেছেন কিন্তু জালে আটকেনি এক থেকে দুইশ’ গ্রামের বেশি ডিম।
তাদের মতো এখানে হতাশ হয়ে নৌকা নোঙর করে ক্লান্ত শরীরে বসেছিলেন উরকিরচরের মৎস্যজীবী মোহাম্মদ রফিক ও তপন দাস সহ অন্তত অর্ধশত মৎস্যজীবী। সকলেই জানিয়েছেন রাতে অপেক্ষায় থাকবেন ডিমের আশায়।
ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় থাকা অনেকেই বলেছেন নদীর পানিতে লবণাক্ততা রয়েছে। ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের বর্ধিত পানি নদীর পাড় ডিঙ্গিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
এই পানি অনেকের কুয়ায় (ডিম ফোটানোর জন্য তৈরি রাখা মাটির কুয়া) প্রবেশ করেছে।
ডিম সংগ্রহ করা গেলেও ওইসব মাছের ডিম কুয়ার লবণাক্ত পানিতে রেখে পোনা রূপান্তর করতে হলে তুলনামূলকভাবে বেশি ডিম নষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে, নদীতে মা মাছ ডিম দেয়ার সংবাদে হালদায় ছুটে গেছেন রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।
তিনি স্পিডবোট নিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পরিদর্শন করে নৌকা ও জাল নিয়ে মৎস্যজীবীদের ছোটাছুটি দেখেন, কথা বলেন তাদের সাথে।
সাংসদ তাদের উদ্দেশে বলেন, “হালদা এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। এই নদীর মা মাছ রক্ষায় সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা জাল পেতে মাছ মারবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এসময় তার সাথে ছিলেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।
জানা যায়, রাত থেকে সারাদিন নদীতে তৎপর ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া।
নদীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে তার সাথে ফোনে কথা বললে তিনি জানান, নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মা মাছ ডিম দিতে বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন লবণাক্ততা না কমা পর্যন্ত মা মাছ ডিম দেয়ার সম্ভাবনা কম। মাছ কখন ডিম দেবে তা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে বলে তিনি অভিমত দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকসই অধিকার নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে কাজ করছে জাতিসংঘ
পরবর্তী নিবন্ধসন্দেহভাজন প্রতিবেশী যুবক গ্রেপ্তার