ঢাকায় উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু

আরও একজনের দেহে সংক্রমণ নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ

| বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মারা যাওয়া একজন কোভিড রোগীর মধ্যে ‘কালো ছত্রাকের’ সংক্রমণ বা মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ ছিল। তার নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বারডেম হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. নাজিমুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই রোগী গত ২২ মে মারা যান। মিউকরমাইকোসিসের কিছু উপসর্গও তার মধ্যে ছিল, সে কারণে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ল্যাবে। মৃত্যু পরবর্তী টেস্টগুলো আমাদেরকে সেই দিকে সন্দিহান করছে। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা কনফার্ম না যে তিনি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ হাসপাতালেই আরও একজনের দেহে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যিনি বেশ কিছুদিন আগে কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এ মাসে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষায় ওই রোগীর শরীরে মিউকরমাইকোসিস ধরা পড়ে। তিনি সাতক্ষীরা থেকে এসেছিলেন। বেশ আগে খুলনায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারডেমে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সামপ্রতিক মাসগুলোতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে ‘কালো ছত্রাকের’ সংক্রমণ আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত কয়েক মাসে দেশটিতে প্রায় নয় হাজারের মতো মানুষের দেহে প্রাণঘাতী ‘কালো ছত্রাক’ বা মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের একটি বড় অংশের দেহে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে কোভিড থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে। এ রোগে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশের মতো। অনেক সময় আক্রান্তের প্রাণরক্ষায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখ বা চোয়ালের হাড় অপসারণ করতে হয়। চিকিৎসকরা এ সংক্রমণের সঙ্গে কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েডের যোগ আছে বলে ধারণা দিয়েছেন। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মিউকরমাইকোসিসে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি বলেও মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, এ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু তিনি দেখছেন না। আমি সবার সঙ্গে কথা বলছি বিষয়টি নিয়ে। কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরির নির্দেশ দিয়েছি।
মিউকরমাইকোসিস কি : মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ ঘটে। মাটি, গাছপালা, বিষ্ঠা এবং পচা ফল ও সবজি থেকে কেউ মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে আসতে পারেন। মাটি ও বাতাস এবং এমনকি সুস্থ মানুষের নাকে বা কফেও এটা পাওয়া যায়।
যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের মাথাব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তা পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের পাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
এ ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস, এইডস বা ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুরক্ষা কীভাবে?
পরবর্তী নিবন্ধভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়ছে