ডা. মাসুদ পারভেজ : একটা হঠাৎ মৃত্যু ও আমাদের করণীয়

অধ্যাপক (ডা.) প্রবীর কুমার দাশ | মঙ্গলবার , ২৫ মে, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

সকলের প্রিয় চিকিৎসক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চক্ষুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মাসুদ পারভেজকে শিরোনাম করে এমন একটা লেখা লিখতে হবে কখনও কল্পনা করিনি। এ যেন এক বিপন্ন বিস্ময়! গত ৬ মে দিবাগত রাতে ডা. মাসুদ হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তা হঠাৎ হৃদরোগ জনিত মৃত্যু (ংঁফফবহ পধৎফরধপ ফবধঃয), যার কারণ হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক এক ছন্দহীনতা বা অ্যায়িমিয়া, যা এই অঙ্গকে আকস্মিকভাবে থামিয়ে দিয়েছে। এটাই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (পধৎফরধপ ধৎৎবংঃ)। ছন্দে ছন্দে অবিরাম রক্ত পাম্প করার কাজে নিয়োজিত হৃৎপিণ্ড থেমে গেলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং তা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বুকে ম্যাসাজ শুরু করা গেলে হঠাৎ থেমে যাওয়া হৃৎপিণ্ডকে সচল করা যায়। তার পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে মুখে শ্বাস করলে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান ফিরে আসে। হৃৎপিণ্ড ও শ্বাসপ্রশ্বাস পুনঃ প্রতিষ্ঠার এই পদ্ধতিকে বলা হয় সিপিআর (পধৎফরড় ঢ়ঁষসড়হধৎু ৎবংঁংপরঃধঃরড়হ)। এই মৃত্যুঞ্জয়ী ব্যবস্থা মৌলিক জীবন সহায়তাকারী ব্যবস্থা (নধংরপ ষরভব ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ) হিসাবে বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত।
অন্যান্য অনেকের মতো ডা. মাসুদ ব্যক্তিগতভাবে আমারও অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিল। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা সীতাকুন্ডু উপজেলার বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মুহাম্মদ এখলাস উদ্দিন সাহেবের একমাত্র পুত্র। মাসুদ তার পিতাকে বিভিন্ন সময়ে চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে আমার রুমে, কখনও বা আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে আসতেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আমি তাঁর চিকিৎসার ফাঁকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতাম। তিনি তাঁর বীরত্বগাথা বলে প্রীত হতেন। বিভিন্ন সময়ে মাসুদের সাথে দেখা হলে তার পিতার কুশলাদি জানার চেষ্টা করতাম। মাসুদ সিলেট মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজির প্রাক্তন অধ্যাপক আমার শ্বশুর প্রয়াত ডা. এ কে সরকারের প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম। মাসুদ আমার সহধর্মিণী চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সুমনা সরকারের মেন্টর। তাই মাসুদের সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল বহুমাত্রিক। তা সত্ত্বেও মাসুদের শারীরিক কোন সমস্যার কথা কখনও আমার গোচরীভূত হয়নি। আমরা প্রতিবছর কার্ডিওলজি বিভাগের উদ্যোগে চিকিৎসকদের হৃদরোগ সংক্রান্ত চেক আপ ও কার্ডিয়াক স্ক্রিনিং কর্মসূচি গ্রহণ করি। দুর্ভাগ্যবশত করোনা পরিস্থিতিতে গেল বছর তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কার্ডিয়াক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম ছাড়াও হৃদরোগে আক্রান্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদানে এই বিভাগের সিসিইউতে চিকিৎসকদের জন্য বিছানা সংরক্ষিত করা হয়েছে। এই বিভাগে রয়েছে দু’টো সুসজ্জিত ক্যাথল্যাব, যেখানে নিয়মিত করোনারি এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্ল্যাষ্টি, পেস্‌মেকার, ষ্টেন্টিং সহ অত্যাধুনিক ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা চলমান। পরিতাপের বিষয়, মাসুদের আকস্মিক মৃত্যুকালে এই সেবাগুলো কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। তথ্যানুসন্ধানে জানতে পারি ডায়াবেটিস ছাড়া মাসুদের তেমন কোন শারীরিক সমস্যা ছিল না। তার জীবনযাত্রাও ছিল সুনিয়ন্ত্রিত। তা সত্ত্বেও কোন পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাসুদের এভাবে চলে যাওয়া হৃদয় বিদারক। তা এক অপূরণীয় ক্ষতিও বটে।
ডা. মাসুদের মতো সমাজের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর সংবাদ প্রতিনিয়ত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এদের সংখ্যা হয়ত সীমিত কিন্তু নাম না জানা অসংখ্য ব্যক্তি প্রতিদিন হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করছে।তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন। এদের ক্ষুদ্র একটি অংশ হাসপাতাল অব্দি পৌছাতে পারে। অধিকাংশই হাসপাতালের বাইরে আবাসস্থলে, কর্মস্থলে, পথে-ঘাটে কিংবা যানবাহনে অবস্থান কালে হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে। এটা সহজেই অনুমেয় যে, বিশ্বের উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও হঠাৎ মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হওয়া বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক ও ইস্কোমিয়া জনিত হৃদরোগের কারণে ঘটে। এই ধরনের হৃদরোগীদের কারো কারো হৃদরোগের পূর্ববর্তী কোন উপসর্গ যেমন বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ আপাত সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও হঠাৎ মৃত্যুর প্রধান কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং এভাবে হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে পড়াই তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রথম উপসর্গ।
ইস্কোমিয়াজনিত হৃদরোগ নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়্ত
*এই রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৫০ জনের মৃত্যুই হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঘটে।
* হঠাৎ মৃত্যু বরণকারীদের শতকরা ৫০ জনের ক্ষেত্রে এটাই প্রথম উপসর্গ।
* তা ঘটে আক্রান্ত ব্যক্তি তার উৎপাদনশীলতার শীর্ষে অবস্থান কালে। এতে তাদের জীবনের শতকরা ৫০ ভাগ উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়।
এটাই ‘শতকরা ৫০ ভাগ এর নিয়ম’। এতে হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই গুরুতর হৃৎ-সংকটের গুরুত্ব সহজে অনুধাবন করা যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, খৃষ্টপূর্ব ৪০০ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক হিপ্পোক্রেট্‌স মাথা ঘুরানো ও বুক ধড়ফড়ের সাথে হঠাৎ মৃত্যুর সম্পর্ক বর্ণনা করেছেন। ১৪৯০ সালে নিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি হঠাৎ মৃত্যুবরণকারীদের শরীর ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে দেখতে পান তাদের হৃৎপিণ্ডের রক্তনালী সরু এবং শুকিয়ে পড়েছে। সভ্যতার অগ্রগতি, জীবন যাত্রার পরিবর্তন ও হৃদরোগের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বৃদ্ধির কারণে এই সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকায় প্রতি বছর পয়ত্রিশোর্ধদের এক হাজারে একজন হঠাৎ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে, যা বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়তে থাকে। এই প্রকোপ ৪০-৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এখানে প্রতিবছর ৬ লক্ষ লোক হঠাৎ মৃত্যুবরণ করে, যার দু্‌ই তৃতীয়াংশই ঘটে হাসপাতালের বাহিরে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও আমাদের দেশেও তা মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। হৃদরোগ চিকিৎসার প্রভূত উন্নতির ফলশ্রুতিতে এখন এ ধরনের হঠাৎ মৃত্যুরণকারীর জীবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ১৯৬০ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এই মৃত্যুঞ্জয়ী ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। এটাই সিপিআর। এই ব্যবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিৎ করে শুইয়ে বুকের ঠিক মাঝখানে দ্রুত ও শক্তিশালী ম্যাসাজ বা চাপ প্রয়োগ করে হৃৎপিন্ডকে বুকের চ্যাপ্টা হাড় ষ্টার্নাম এবং পিঠের মেরুদন্ড- এই দ’ুয়ের মাঝখানে সংকুচিত করা হয়। কার্যকর সংকোচনের জন্য ষ্টার্নামকে ৪-৫ সে.মি. দাবিয়ে দিতে হয়। একজন সিপিআর দানকারীর ক্ষেত্রে ৩০ঃ১ (ত্রিশবার ম্যাসাজ ও একবার শ্বাস) এবং দুইজন সিপিআর দানকারীর ক্ষেত্রে ১৫:২ (পনের বার ম্যাসাজ ও দুইবার শ্বাস) অনুপাতে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরে আসলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিকটস্থ সিসিইউতে স্থানান্তর আবশ্যক। সিপিআর এর সুফল নির্ভর করে কত দ্রুত তা শুরু করা যায় তার উপর। বিলম্বিত সিপিআর ফলপ্রসূ হয় না। কারণ ৩-৪ মিনিটের মধ্যে হৃৎপিণ্ডকে সচল করা না গেলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি ঘটে যায়। এই অবস্থা থেকে আর ফেরানো সম্ভব হয় না। এটাই ‘ব্রেইন ডেথ্‌’। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক রোগীর মৃত্যু ঘোষণা করেন। কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট এর আকস্মিকতা ও দ্রুতলয়ে তা মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি সাধনের কারণে চিকিৎসক ছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সিপিআর জানা আবশ্যক। কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট যেকোন পরিস্থিতিতে ঘটতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হাসপাতালের বাইরে ঘটে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আক্রান্তের আশে পাশে অবস্থানকারীদের দায়িত্ব এই সিপিআর দেয়া। এখানে কালক্ষেপণের কোন সুযোগ নেই। চিকিৎসককে ডেকে আনার কোন অবকাশ নেই। তাই তা মৌলিক জীবন সহায়ক ব্যবস্থা। আক্রান্ত ব্যক্তি জ্ঞান ফিরে ফেলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করে উন্নত জীবন সহায়ক ব্যবস্থা (ধফাধনপব ষরভব ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ) প্রদান করা হয়। তার অংশ হিসাবে হৃৎপিণ্ডের ছন্দহীনতা নিয়ন্ত্রণে ডিসি শক্‌্‌ এবং কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য শ্বাসনালীতে নল দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। সাথে প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এখানে ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষায় হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়লে রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে ৯০ মিনিটের মধ্যে করোনারি এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাষ্টি ও রিং লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ না পাওয়া গেলে এনজিওগ্রাম ও প্রয়োজনীয় এনজিওপ্লাষ্টি ২৪ ঘন্টার মধ্যে করা যাবে। এই ধরনের ইন্টার-ভেনশনাল চিকিৎসার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের বন্ধ হয়ে পড়া রক্তনালী খুলে দিলে রক্ত প্রবাহ পুনঃস্থাপিত হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড তার স্বাভাবিক ছন্দে কাজ শুরু করে।
কার্ডিয়াক আ্যরেস্ট ও ‘ক্লিনিকাল ডেথ্‌’ সমার্থক। কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট ঠেকিয়ে দেয়া মানে মৃত্যুর দ্বার থেকে ফিরে আসা। তবে বিভিন্নমুখী সীমাবদ্ধতার কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে বেঁচে উঠা রোগীর সংখ্যা সীমিত। তাই তার প্রতিরোধই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের সহজ উপায়। কার্ডিয়াক অ্যারেষ্টের পরে গৃহীত প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিরোধ। এক্ষেত্রে হৃদরোগ চিকিৎসার পাশাপাশি তার ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানগুলোর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের উচ্চ কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান বর্জন। পাশাপাশি জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের প্রভূত পরিবর্তন মেনে চলা আবশ্যক। ধূমপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ানো ছাড়াও ছন্দহীনতার কারণ। অ্যালকোহল সেবনেও ছন্দহীনতা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ হৃৎপিণ্ডের ছন্দহীনতার সাথে সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, রাগী ব্যক্তিদের হঠাৎ মৃত্যুর আশংকা বেশী। তাই মেডিটেশন ও অন্যান্য উপায়ে ক্রোধ সংবরণের অভ্যাস করতে হবে। ব্যায়াম সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য আবশ্যক। তবে হৃদরোগীদের যে কোন ব্যায়াম শুরুর আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। হঠাৎ তীব্র মাত্রার ব্যায়াম কার্ডিয়াক অ্যারেষ্টের কারণ হতে পারে। যেহেতু কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট ৪৫-৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে সর্বোচ্চ তাই পঁয়তাল্লিশোর্দ্ধদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের লক্ষণ না থাকলেও নিয়মিত চেক আপ ও পরীক্ষা আবশ্যক। চেক আপের তথ্যানুসন্ধানে থাকবে নাড়ীর গতি, রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, উচ্চতা ও ওজন। রুটিন পরীক্ষায় থাকবে ডায়াবেটিস সনাক্তকরণে অভুক্ত অবস্থায় ও দুই ঘন্টা পর রক্তের গ্লুকোজ, রক্তের উচ্চ কোলেষ্টেরল সনাক্তকরণে অভুক্ত অবস্থায় লিপিড প্রোপাইল ইত্যাদি। হৃদরোগ ও হৃৎপিণ্ডের ছন্দহীনতা সনাক্তকরণের সহজ পরীক্ষা ইসিজি আর হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা ও হৃৎপেশীর অবস্থা নিরুপণে ইকোকার্ডিওগ্রাফি। উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যায়ামরত অবস্থায় ইসিজি বা ইটিটি করে ইস্কোমিয়া সনাক্ত করতে হয়। কখনও ২৪ ঘন্টার ইসিজি বা হল্টার পরীক্ষায় হৃৎপিণ্ডের ছন্দহীনতা ধরা পড়ে। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর ব্লক বা প্রতিবন্ধকতা নিশ্চিত হওয়ার পরীক্ষা করোনারী এনজিওগ্রাফী । এভাবে হৃদরোগ সনাক্ত করে তার জন্য ওষুধ চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এটাই প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
পরিশেষে এই প্রাণঘাতি অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আগেভাগে হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান এবং এই রোগ সনাক্ত করা জরুরি। ইস্কেমিয়া জনিত হৃদরোগ প্রতিরোধই হঠাৎ মৃত্যু এড়িয়ে চলার সহজ উপায়। তারপরও এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি দেখা দিলে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সবার সিপিআর জানতে হবে। আসুন আমরা হঠাৎ মৃত্যু সনাক্ত করতে যত্নবান হই। আমরা সিপিআর জেনে রাখি; অন্যদের তা জানাতে সচেষ্ট হই। মনে রাখবেন, সিপিআর এর মাধ্যমে আপনি এমন একজনের জীবন বাঁচাতে পারেন যে আপনার অতিপ্রিয় ও আপনজন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, হৃদরোগ বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্লিজ, আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন
পরবর্তী নিবন্ধপেন্টাগনের গোপন দলিল ফাঁসের কাহিনী ও ফিরে দেখা