চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে রেললাইনের উন্নয়নে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো, তা শেষ করতে আরো সময় লাগবে বলে জানা গেছে। গত ২১ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আরো দুই বছর মেয়াদ বেড়েছে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের গুরুত্বপূর্ণ ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হয়েছে মোট ৭৫ শতাংশ কাজ। করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রকল্পের কাজ সীমিত পরিসরে চলছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩১ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকী ৭২ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি শেষ হলে মাত্র সোয়া তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ভ্রমণ সম্ভব হবে। একই সঙ্গে একাধিক সরাসরি ট্রেনসহ আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা যাবে।
ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যোগাযোগ আরো উন্নত করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিলো। একসময়ে বুলেট ট্রেন চালুর জন্য প্রচেষ্টা ছিল বেশি। এর জন্য সমীক্ষা প্রকল্পটিও অনুমোদন করা হয় ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ। একই বছরের ৩১ মে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। সমীক্ষাটি শেষ হয়েছে ২০২০ সালে। তার মধ্য দিয়ে দেখা দিয়েছিল ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন চালু হওয়ার সম্ভাবনা। বলা হয়েছে, বুলেট ট্রেনটি চালু হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে মাত্র ৫৫ মিনিটে। অর্থাৎ ছয় ঘণ্টার জায়গায় সময় বাঁচবে পাঁচ ঘণ্টা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত দ্রুতগতির রেলপথটি যাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মধ্য দিয়ে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা বা লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন লাইন নির্মাণ করা হলে এ পথে যাতায়াতে এক ঘণ্টারও কম সময় লাগবে। রেলপথটি কঙবাজার পর্যন্ত বর্ধিত করা হলে পর্যটন নগরী কঙবাজারে যাতায়াতও সহজ হয়ে যাবে। সমীক্ষা প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১০০ কোটি ৬৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের ০১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু ডলারের দাম ও পরামর্শক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পিছিয়ে যায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন প্রকল্প। সমীক্ষা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এখন পরবর্তী মূল প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে বুলেট ট্রেনে ভ্রমণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক বছর। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের ৩২১ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। তবে উচ্চগতির রেলপথটি আগের রেলপথের চেয়ে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার কম হবে। এক্ষেত্রে উচ্চগতির রেলপথ দাঁড়াবে ২২৭ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বুলেট ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে।
রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু যে পরিবেশবান্ধব তা নয়, এগুলোকে দরিদ্রবান্ধব পরিবহনব্যবস্থাও বলা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিচারেও সড়ক পরিবহনের চেয়ে রেলপথ উত্তম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের প্রতিবেশী ভারতের ট্রেনগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ যাঁদের হয়েছে, তাঁরা ঠিকই উপলব্ধি করবেন, তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্কটিকে কতখানি সহজলভ্য ও আরামদায়ক করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ভারতে গেলে আফসোসের অন্ত থাকে না আমাদের দেশের রেলওয়ের দুর্দশা দেখে। ব্রিটেনের মানুষ পারতপক্ষে সড়কপথে ভ্রমণ করে না, তাদের রেলযোগাযোগের স্বল্প ব্যয় ও আরামপ্রদ ব্যবস্থার কারণে। ট্রেনে ভ্রমণ এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষের বেশি পছন্দনীয়। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের এই অবদানটিকে প্রশংসনীয় মনে করেছেন ঐতিহাসিকেরাও। তাই এবার রেলওয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে বেশি করে নজর দেওয়া হোক। বিশেষত রেলওয়ে ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ তুলনামূলকভাবে সহজসাধ্য। তাই এবারের উন্নয়ন বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলওয়েকে বেছে নিন। প্রয়োজনে এই মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গতিশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করুন। সোয়া তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ভ্রমণ সম্ভব হওয়ার বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার। কোনো ধরনের অবহেলা বা গাফেলতি না, রেলের উন্নয়নে মনপ্রাণ ঢেলে কাজ করতে হবে।