নিষিদ্ধকালে কঠোর মনিটরিং সাথে মানবিক সহায়তা

চট্টগ্রামে ২৭ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিশেষ ভিজিএফ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৩ মে, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ কর্মসূচি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে চায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এজন্য একদিকে কঠোর মনিটরিং এবং অন্যদিকে সাগর থেকে মৎস্য আহরণ করে এমন পরিবারগুলোর মাঝে ‘মানবিক সহায়তা’ হিসেবে চাল বিতরণ করা হবে। মনিটরিংয়ের জন্য চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে টিম গঠন করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর বাইরে নগরে ও সাত উপজেলায় কাজ করবে আরো ছয়টি টিম। নিষিদ্ধকালীন জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে মৎস্য আইন বাস্তবায়নে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এদিকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সারা দেশের ১৪টি উপকূলীয় জেলার দুই লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৯৫ জেলে পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জেলে পরিবার আছে ২৭ হাজার ২৩টি। চট্টগ্রামের জেলে পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করার জন্য ‘বিশেষ ভিজিএফ’ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৫৩৩ দশমিক ২৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ফলে এ সময়ে সকল যান্ত্রিক, অযান্ত্রিক নৌ-যান ও বাণিজ্যিক ট্রলার দিয়ে মৎস্য আহরণ করা যাবে না। ২০১৫ সাল থেকে এ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন জানান, ৬৫ দিন সমুদ্রে কোনো প্রকার নৌ-যান দিয়ে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা চেয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ ও সশস্ত্র বিভাগে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে তিনটি বিভাগীয় মনিটরিং টিম গঠন করেছে।
চট্টগ্রামে সাত মনিটরিং টিম : কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভাগীয় টিমের বাইরে চট্টগ্রামে ছয়টি পৃথক মনিটরিং টিম কাজ করবে। এর মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য সাত সদস্যের একটি টিম গঠন করে দেয়। বিভাগীয় টিমে আছেন সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক ড. মো. শরীফ উদ্দিন।
এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগের অধীনে বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মীরসরাইয়ে পৃথক পাঁচটি টাস্কফোর্স কাজ করবে। নগরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলীর নেতৃত্বে মনিটরিং করা হবে। একইসঙ্গে তিনি পুরো জেলার কার্যক্রম তদারকি করবেন। এর বাইরে সাগরে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশও কাজ করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন চৌধুরী।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী আজাদীকে বলেন, কিছুদিন আগে থেকেই সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। জেলেপাড়ায়, আড়ত এবং মৎস্য অবতরণ ঘাটে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও সচেতনতামূলক সভা করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন ঘাটে যাচ্ছি। সেখানে ফ্রেশ কোনো মাছ আসছে কিনা পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি বলেন, সমন্বিতভাবে কর্মসূচি সফল করতে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনসহ মিলে কাজ করছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। আবার উপজেলা পর্যায়েও সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। সেখানে টাস্কফোর্স আছে। আমি নিজেও উপজেলার কার্যক্রম তদারকি করব।
চট্টগ্রামের ২৭ হাজার ২৩ জেলে পরিবার পাবে সহায়তা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ করে চট্টগ্রামে এমন জেলে পরিবার আছে ২৭ হাজার ২৩টি। এর মধ্যে নগরে আছে দুই হাজার ৫০৩টি এবং সাত উপকূলীয় উপজেলায় আছে বাকি ২৪ হাজার ৫০টি পরিবার। পরিবারগুলোর জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রথম কিস্তিতে এক হাজার ৫৩৩ দশমিক ২৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দকৃত চাল প্রতি পরিবার পাবে ৫৬ কেজি করে। এক্ষেত্রে পরিবার প্রতি ৫৬ কেজি হারে ৪২ দিনের জন্য চালগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে দ্বিতীয় কিস্তিতে প্রতি পরিবারকে আরো ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। অর্থাৎ কর্মসূচি চলাকালে প্রতি পরিবার ৮৬ কেজি করে মানবিক সহায়তার চাল পাবে।
প্রসঙ্গত, পুরো দেশে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালীন উপকূলীয় ১৪টি জেলার দুই লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৯৫ জেলে পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের মাঝ্যে প্রথম কিস্তিতে বিতরণের জন্য ১৬ হাজার ৭২১ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে জেলে পরিবার আছে আট হাজার ৭২৮টি। তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৮৮ দশমিক ৭৬৮ মেট্রিক টন চাল। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলার তিন হাজার ৫৮৯ জেলে পরিবারের জন্য ২০০ দশমিক ৯৮৪ মেট্রিক টন, মীরসরাইয়ে দুই হাজার ১২৬ জেলে পরিবারের জন্য ১১৯ দশমিক ০৫৬ মেট্রিক টন, সন্দ্বীপে চার হাজার ৮৭২ জেলে পরিবারের জন্য ২৭২ দশমিক ৮৩২ মেট্রিক টন, কর্ণফুলীতে ৪০০ জেলে পরিবারের জন্য ২২ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন এবং সীতাকুণ্ড উপজেলায় চার হাজার ৮০৫ পরিবারের জন্য ২৬৯ দশমিক ০৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগরের জেলে পরিবারগুলোর জন্য ১৪০ দশমিক ১৬৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় দফায় এসএসসির ফরম পূরণের সুযোগ ২৯ মে পর্যন্ত
পরবর্তী নিবন্ধরোজিনা ইস্যু পুঁজি করে ফায়দা লোটার ষড়যন্ত্র হচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী