১৩৬ কোটি টাকার কাজ পেতে দেনদরবার?

চতুর্থবারের দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ।। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল ১ বছর

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২২ মে, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

‘চট্টগ্রাম জেলাধীন রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্যান্য খালের উভয় তীরের ভাঙন হতে রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হাতে নেয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির ১৩৬ কোটি টাকার কর্ণফুলী নদীর ১০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ পেতে প্রভাবশালীদের দেনদরবারের অন্ত নেই। বর্তমানে চতুর্থ পর্যায়ের দরপত্র মূল্যায়ন পরবর্তী কার্যাদেশ দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালীদের চাপে ইতোমধ্যে প্রকল্পটির তিনবার দরপত্র বাতিল করেছে পাউবো।
ড্রেজিং কাজটির পেছনে সরকারের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয়বারের দরপত্রে মূল্যায়ন শেষে দেশের স্বনামধন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হলেও প্রভাবশালীদের চাপে কার্যাদেশ দিতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রভাবশালী এক নেতা নিজের ভাইকে কাজ পাইয়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন। পক্ষটি পুরো কাজটি চাইছেন, অন্যথায় কমিশন চাইছে। যে কারণে তৃতীয়বারে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করার পরেও কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে পুরো দরপত্র বাতিল করতে হয়েছে।’
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই) এর কোন প্রতিনিধির বক্তব্য পাওয়া না গেলেও অভিযোগের বিষয়টি মানতে নারাজ প্রকল্প পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি একবছর আগে প্রকল্পটির দায়িত্ব নিয়েছি। ২০১৯ সাল থেকে প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। আমার আগেও দুইবার দরপত্র বাতিল হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় বারের দরপত্রটিও আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বাতিল করেছি।’ এ প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কোন প্রভাবশালীদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। মূলত দরপত্রের শর্ত মোতাবেক কারো (আগ্রহী ঠিকাদার) কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। কেউ দরপত্রে অংশগ্রহণ করলেও চাহিত কাগজপত্র কিংবা অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। যে কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর ১০ কিলোমিটার ড্রেজিং কাজের জন্য ডিটেইল প্রজেক্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) ১৮৮ কোটি টাকা রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে ১৩৬ কোটি টাকার কাজ রয়েছে। চতুর্থ দফার টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। মূল্যায়নও হয়ে গেছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কার্যাদেশ দেওয়া হবে।’ ১০ কিলোমিটার ড্রেজিং কাজে আনুমানিক ৮০ লক্ষ ঘনমিটার মাটি অপসারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন অংশে কর্ণফুলী, ইছামতি নদী ও শিলক খালের ভাঙন রোধের পাশাপাশি নদীতে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে গতিপথের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পে কর্ণফুলী ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালের ভাঙন কবলিত বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ১২ কি.মি. তীর সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষা কাজের পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী ও ইছামতি নদীর ১৬ কি.মি. ড্রেজিং রয়েছে। এরমধ্যে কর্ণফুলী নদীর উজানে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট থেকে কালুরঘাট সেতুর আগ পর্যন্ত ১০ কি.মি. ড্রেজিং কাজ রয়েছে। প্রকল্পে তীর প্রতিরক্ষা কাজে ১৯৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং ড্রেজিংয়ে ২০০ কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ড্রেজিংয়ে শুধুমাত্র কর্ণফুলী নদীর ১০ কি.মি. ড্রেজিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় প্রায় ১৮৮ কোটি টাকা। ইছামতি নদীর রাজানগর থেকে ঘাটচেক পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের জন্য রাখা হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ইছামতি নদীর ৬ কিলোমিটার অংশে নতুন করে নদীর ভাঙনসহ জটিলতা সৃষ্টির আশংকায় ড্রেজিং না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত থাকলেও ড্রেজিং কাজ শুরু করতে না পারার কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর ১০ কি.মি. ড্রেজিংয়ের জন্য তৃতীয় বারের দরপত্রের কার্যক্রম গত ২৪ জানুয়ারি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থবারে ৬ লটের দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৫ মার্চ ৪ লটের এবং ২৩ মার্চ ২ লটের দরপত্র পাওয়া যায়। প্রত্যেক লটে ঠিকাদাররা অংশ নিয়েছেন। দরপত্রের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম দৈনিক আরও বলেন, ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করা না গেলেও তীর সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষা কাজের প্রায় ৭৫ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। সবমিলিয়ে পুরো প্রকল্পের প্রায় ৩৭ শতাংশ কাজ হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই ড্রেজিং কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৩ জনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধরোজিনা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী