বিবিসি প্যানারোমাকে ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার দেওয়া সেই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার নিতে সাংবাদিক মার্টিন বশির প্রতারণা করেছিলেন। আর এ ঘটনায় বিবিসিও তার উচ্চমার্গের সততা ও স্বচ্ছতার মানদন্ড বজায় রাখতে পারেনি। ২৫ বছর আগের ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এ সত্য। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য সাংবাদিক বশির জাল নথি ব্যবহার করেছিলেন এবং বিবিসি’র ম্যানেজারদের কাছে পরে এ নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন।
বিবিসি বলেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যর্থতার আলামত স্পষ্ট হয়েছে। আমরা এজন্য অত্যন্ত দুঃখিত। সাংবাদিক বশিরও জাল নথি ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে বশির বলেন, এই নথিগুলোর কারণেই ডায়ানা সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছিলেন বলে তিনি মনে করেন না। খবর বিডিনিউজের।
দাম্পত্যে ভাঙনের কথা ওই সাক্ষাৎকারেই প্রথম বলেছিলেন ডায়ানা। তার ভাই চার্লস পেন্সার গত বছর নভেম্বরে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করে বলেছিলেন, ডায়ানাকে সাক্ষাৎকারটি দেওয়াতে অনৈতিক পথ ধরেছিলেন সাংবাদিক। এরপরই বিবিসি সেই সত্য সন্ধানে তদন্ত শুরু করে। সাবেক বিচারক লর্ড ডাইসনকে প্রধান করে নভেম্বরেই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে বিবিসি। বৃহস্পতিবার ডাইসনের তদন্ত প্রতিবেদনে উপসংহার টেনে বলা হয়েছে, সাংবাদিক মার্টিন বশির ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখিয়েছিলেন ডায়ানার ভাই স্পেনসারকে। যাতে ডায়ানার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের আয়োজন করে দিতে উদ্যোগী হন স্পেনসার। স্পেনসারের অভিযোগ ছিল, বশিরের দেওয়া ব্যাংকের ভুয়া কাগজপত্রে দেখানো হয়েছিল, নিরাপত্তা বাহিনী রাজপরিবারের দুই সদস্যকে ডায়ানার গোপন তথ্য জানানোর জন্য অর্থ দিয়েছে। এটা দেখার পরই ডায়ানার সঙ্গে বশিরের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। ওই দলিলগুলো না দেখলে স্পেনসার একাজ করতেন না বলেই দাবি করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, বশির ঠিক কাজ করেননি। তিনি যা করেছেন তাতে নৈতিক এবং সুষ্ঠু সাংবাদিকতার নীতিমালা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। একইসঙ্গে বশিরের অপকর্মের অভিযোগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিবিসিও ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিসি’র ডিরেক্টর জেনারেল টিম ডেভি বলেন, যদিও তদন্ত রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে প্রিন্সেস ডায়না নিজেই সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছেন, তবুও সাক্ষাৎকার আয়োজনের পদ্ধতিতে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। দর্শকেরা আমাদের কাছ থেকে আরও বেশি আশা রাখেন। আজকের বিবিসি প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিষয়ে আরও অনেক বেশি সতর্ক। প্রিন্সেস ডায়নার সাক্ষাতকারটির প্রক্রিয়া আরও বেশি গভীর ও স্বচ্ছভাবে খতিয়ে দেখা উচিৎ ছিল। প্রায় সিকিশতক আগের সময়ে আমরা ফেরত যেতে পারব না। তবে আজকের বিবিসি পরিপূর্ণ ও নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে পারে। কর্পোরেশনটির চেয়ারম্যান রিচার্ড শার্প বলেন, বিবিসি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়েছে।