খাগড়াছড়িতে লিচুর ফলন বিপর্যয় গাছ কেটে ফেলছেন কৃষকরা

টানা তাপদাহ ও পোকার আক্রমণ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ১৯ মে, ২০২১ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

জলবায়ু পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া ও পোকার আক্রমণে খাগড়াছড়িতে ভয়াবহ মাত্রায় লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারো বাগানি। অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশায় লিচু গাছ কেটে ফেলছেন।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ২ হাজার ২শ ১৫ হেক্টর জমিতে চায়না টু ও থ্রি জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৪ মে. টনের বেশি লিচু উৎপাদনের কথা থাকলেও তা হয়নি। বছরের এই সময় বাগানে থোকায় থোকায় লিচু থাকার কথা থাকলেও এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছে ফলনই আসেনি। সারাবছর বাগান পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের পরও ফলন না আসায় হতাশ চাষিরা। বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেও লোকসানের মুখে তারা। গত দুই বছর ধরে এভাবে চলায় অনেক চাষী ক্ষোভ ও হতাশায় লিচু গাছ কেটে ফেলছেন।

খাগড়াছড়ির পানছড়ির উপজেলার ২ নম্বর বানছড়া এলাকায় ২০০৭ সালে লিচু বাগান করে কৃষক সুজন চাকমা। বাগানে প্রায় ২৬শ লিচু গাছ রোপণ করেন তিনি। সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়ার পরও লিচু গাছে কাঙ্ক্ষিত ফলন আসেনি। এতে ক্ষোভ ও হতাশায় ১৪শ লিচু গাছ কেটে ফেলেছেন তিনি।
কৃষক সুজন চাকমা জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আমি লিচুর বাগান করেছি। কিন্তু নিয়মিত ফলন পাচ্ছি না। এ পর্যন্ত লিচু বাগানে বিনিয়োগ করেছি প্রায় ৭৮ লাখ টাকা। গত ১৪ বছরে মাত্র ৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছি। এবছরও ফলন না আসায় ১৪শ লিচু গাছ কেটে ফেলেছি। এত বিনিয়োগ করেও লোকসান ছাড়া লাভের মুখ দেখিনি।
সরেজমিনে সুজন চাকমার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের সারি সারি লিচু গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। খালি হওয়া জায়গায় নতুন করে আম গাছ লাগানো প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
পানছড়ির আরেক কৃষক অংহ্ল্যা মারমা বলেন, গত কয়েকবছর ধরে লিচু গাছে ফলন আসছে না। এবারো কোনো ফলন হয়নি। সারাবছর লিচু বাগানে নিয়মিত সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। অথচ ফলাফল শূন্য। অনেক চাষী লিচু গাছ কেটে ফেলছেন।
ফুলের পরাগায়নের সময় তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। ফলন বিপর্যয় রোধে নতুন জাতের লিচু চাষের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমেদ বলেন, প্রতিবছর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় লিচু থাকলেও এবার একেবারেই ভিন্ন চিত্র। জানুয়ারির পর লিচু গাছে ফুল আসে। ঐ সময়ে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ফুল আসেনি। যতটুকু ফুল এসেছিল খরার কারণে তাও ঝরে পড়ে গেছে। এতে অনেক কৃষক লিচু গাছ কেটে ফেলছে। তিনি বারি-৫ জাতের লিচু চাষ করলে এ সমস্যা হবে না বলে পরামর্শ দেন চাষিদের।
খাগড়াছড়ি হটিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, চলতি মৌসুমে টানা তাপদাহের কারণে লিচুর ফলন কমে গেছে। অন্যদিকে মাছি পোকার আক্রমণে পরিপক্ক হওয়ার আগে লিচু ফেটে যাচ্ছে। পোকার আক্রমণ রোধে সেঙফরোমন ফাঁদ ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যেত।
খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৭৮৭ মেট্রিক টন। তবে লিচুর ফলন বিপর্যয় হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি জনগণকে সচেতন না করে সরকারকে দুষছে : কাদের