স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. বাবুল আক্তারের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলেও তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। চার ঘণ্টারও অধিক সময় তিনি ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের খাসকামরায় ছিলেন। কিন্তু জবানবন্দি দেননি। পরে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গতকাল সকালে বহুল আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ৫ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে উপস্থাপন করেন। স্ত্রীকে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত মুখ খুলেন নি তিনি । বিচারকের খাস কামরায় সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত মুখ বন্ধ রেখেই বসে ছিলেন । পরে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ আজাদীকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেন।
এদিকে কারাগারে বাবুল আক্তারের ডিভিশন চেয়ে আদালতের কাছে একটি আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী মো. আরিফুর রহমান আজাদীকে বলেন, মামলার তদন্তকারী সংস্থা ফের রিমান্ড আবেদন করলে আমরা সেটি বাতিল চেয়ে আবেদন করতাম। কিন্তু ফের রিমান্ড আবেদন করেননি তারা। আমরা শুধু কারাগারে বাবুল আক্তারের ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। এদিকে গতকাল না চাইলেও আজ মঙ্গলবার বাবুল আক্তারের ফের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে একটি আবেদন করা হবে বলে পিবিআইয়ের একটি সূত্র আজাদীকে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ১২ মে স্ত্রী মিতুকে খুনের ঘটনায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। সেদিনই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকালের দিকে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে সময় বাবুল আক্তার দাবি করেন, জঙ্গিরাই তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবার মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাবুল যা করেছেন সবটাই ছিল তার অভিনয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ। পরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআই’র ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।